[PDF] এপিটাফ - Apitaf by সাজিদ ইসলাম

এপিটাফ লিরিক্স অর্থহীন এপিটাফ মানে কি এপিটাফ সাজিদ ইসলাম pdf download এপিটাফ pdf এপিটাফ কবিতা এপিটাফ গান এপিটাফ হুমায়ুন আহমেদ, মোহাম্মদ হবলস এর বই pdf

এপিটাফ পিডিএফ by সাজিদ ইসলাম

#৮ বেস্টসেলার আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
লেখক : সাজিদ ইসলাম
প্রকাশনী : বুকমার্ক পাবলিকেশন
বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা, দাওয়াহ, দ্বীনের পথে আহ্বান
ধরণ: লেকচার সংকলণ
পৃষ্ঠা: ১৪৪
কভার: পেপার ব্যাক।

উস্তাদ মুহাম্মাদ হুবলস। অস্ট্রলিয়ান দাঈ। প্রচন্ডভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। মানুষের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিতে পারেন। জাহিলিয়াত থেকে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসা, বস্তুবাদি যান্ত্রিক আটপৌরে জীবনে হাঁপিয়ে উঠা এই আমাদেরকে আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দেওয়া, জান্নাতের পথে চলার সীমাহীন শক্তি যোগাতে এই উস্তাদের তুলনা তিনি নিজেই।

উস্তাদের লেকচার অবলম্বনেই এই বইটি। বর্তমান সময়ে আমরা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছ তা ভয়াবহ। ফিতনার সময় চলছে। আমাদের অনেক সমস্যা, অনেক প্রতিবন্ধকতা। তার মধ্যে অন্যতম মুসলিম পরিবারে জন্মেও উম্মাহর একটা বড় অংশ্যই এখনও কাফেরদের লাইফ স্টাইলে চলে। অনেকসময় আমরা বুঝি যা করছি ভুল করছি, এটা সঠিক পথ নয়, কিন্তু ভুলের সেই চক্র থেকে বের হতে পারি না। তখন আমাদের একটি ধাক্কার দরকার পড়ে। এমন কিছু যা আমাদের অন্তরকে কাঁপিয়ে দিবে। বস্তুবাদ, চোখ ধাঁধানো আলোর এই মোহের জগৎ নিমিষেই ভেঙে গুড়িয়ে দিবে। এই বইটি সেই ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে এই আমাদের বিশ্বাস।

              এপিটাফ


আলি বানাত। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। এমন একটা জীবন তার ছিল, যা আমাদের অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো, মহা আকাঙ্ক্ষিত। সফল ব্যবসা, অর্থ-সম্পদের ছড়াছড়ি, বিলাসিতাময় এক জীবন। ৫০ লক্ষ টাকা দামের হাতের ব্রেসলেট, লক্ষ টাকা দামের সারি সারি লুই ভুটন জুতার কালেকশান, সামান্য চপ্পলের দাম পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার টাকা, ৫ কোটি টাকা দামের ফেরারি স্পাইডার, রেঞ্জ রোভার— কী দুর্দান্ত এক জীবন। উদয়অস্ত আমরা যে মরীচিকার পেছনে ছুটে বেড়াই, আলি তা ছুঁতে পেরেছিলেন। তারপর হঠাৎ একদিন...

তিন বছর আগের কথা। তাড়াহুড়ো করে গরম চা-টা শেষ করতে গিয়ে জিভ পুড়ে গেল। আয়নায় চোখে পড়ল জিভের ওপরে মুখের তালুতে ছোট্ট একটা দাগ। কী মনে করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া... চেকআপ করিয়ে নিতে তো দোষ নেই। রিপোর্ট আসলো। ফোর্থ স্টেইজ টেস্টিকুলার ক্যান্সার। সারা শরীরে ছড়িয়ে গেছে। আর কোনো আশা নেই। জানিয়ে দেয়া হলো— খুব বেশি হলে আর সাত মাস!

সাজানো গোছানো স্বপ্নের মতো আলি বানাতের জীবনে যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু বদলে গেল। টাকা, ব্যবসা, গাড়ি, বাড়ি, বিলাসী জীবন— সবকিছু অর্থহীন হয়ে গেল।

আর কয়দিন পর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে—জীবনের এই বাস্তবতা আলি বানাতকে এক ভিন্ন মানুষে বদলে দিল। ক্যান্সারের কথা জেনে কেমন অনুভূতি হয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে চোখ মুছতে মুছতে, ধরা গলায় খুব অদ্ভুত একটা কথা বলেছিল সে— 'ক্যান্সার আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য গিফট’

সে বলেছিল, 'হঠাৎ করে জীবনের সবকিছু আমার কাছে মূল্যবান হয়ে গেল। আল্লাহর দেওয়া ছোট ছোট নিয়ামতগুলোও আমি দেখতে শুরু করলাম—মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে পারার নিয়ামতটুকুও আমার কাছে অনেক কিছু মনে হচ্ছিল।' ক্যান্সারের মাধ্যমে আলি দুনিয়ার আসল মূল্য উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন একটা ফেরারি স্পাইডারের চেয়ে খালি পায়ে আফ্রিকায় দৌড়ে বেড়ানো একটি শিশুর জন্য এক জোড়া জুতোর দাম বেশি। ক্যান্সার আলিকে বুঝিয়েছিল এ দুনিয়া আর এর মাঝের সবকিছুই মুছে যাবে। আর কাফনের কাপড়ে কোনো পকেট থাকবে না। যখন কবরের প্রশ্নকারীরা আসবে, দুনিয়া এবং এর সমস্ত সম্পদ আমাদের বাঁচাতে পারবে না। মাটির এ খাঁচা মাটিতেই মিশে যাবে, রয়ে যাবে শুধু তাওহিদ, ঈমান, তাক্বওয়া আর নেক আমল।

মিলিয়েনেয়ার আলি নিজের ব্যবসা বিক্রি করে দিলেন। নিজের সম্পদ বিলাতে শুরু করলেন। গড়ে তুললেন Muslims Around The World (MATW) নামের চ্যারিটি। টোগোতে মসজিদ আর স্কুল বানালেন। লাখ লাখ টাকা দামের জিনিস মানুষকে দিয়ে দিলেন।

দুনিয়া ছেড়ে যাবার আগে তাই ভাই আলি দুনিয়াকে ছাড়তে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন৷ নশ্বর দুনিয়াকে বিক্রি করে আখিরাত কিনতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। ক্যান্সার ছিল ভাই আলির জন্য হিদায়াত — আল্লাহর পক্ষ থেকে গিফট।

দুনিয়ার জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা

করতে থাকা আলি বানাত মারা যান গত বছরের ২৯শে মে রাতে। ডাক্তারদের

ঠিক করে দেয়া টাইমফ্রেইমে না, আসমান ও জমিনের অধিপতির নির্ধারিত সময়ে।

দুনিয়াজুড়ে অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করা, জীবনের আসল উদ্দেশ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিদায় নেওয়া আলি বানাত জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্জন করেছিলেন, যেখান থেকে আমাদের জন্যও শিক্ষণীয় আছে।

১। ক্যান্সার—আলাহর পক্ষ থেকে উপহার।

আলি বানাত নিজেই বলেছে ক্যান্সার তাঁর জীবনে আল্লাহর একটা উপহার হয়ে এসেছিল। ক্যন্সার ধরা পড়ার পরই সে আমূল পাল্টে যায়। আল্লাহর পথে নিজের সবকিছু দান করে দেয়। ঈমান, আমল নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতি নিতে থাকে। দীর্ঘ তিন বছরের ক্যান্সারের সীমাহীন কষ্ট, ব্যথা-বেদনার মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ তার অতীতের গুনাহগুলোও আল্লাহ মাফ করিয়ে নিয়েছেন। কেননা, আমাদের প্রিয় নবিজি (সা.) বলেছেন, মুমিনের পায়ে যদি সামান্য একটা কাঁটাও ফুটে, এর বিনিময়েও আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।

‘যে কোনো মুসলিমের কোনো কষ্ট পৌঁছে, কাঁটা লাগে অথবা তার চেয়েও কঠিন কষ্ট হয়, আল্লাহ তাআলা এর কারণে তার পাপসমূহকে মোচন করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ