ফাহমুস সালাফ : দীন বোঝার কষ্টিপাথর by ইফতেখার সিফাত | Mahmus Salaf - Din Bojhar Kosti Pathor - Iftekhar Sifat

ফাহমুস সালাফ : দীন বোঝার কষ্টিপাথর pdf by ইফতেখার সিফাত | Mahmus Salaf - Din Bojhar Kosti Pathor - Iftekhar Sifat book pdf rokomari pdf book download

ফাহমুস সালাফ : দীন বোঝার কষ্টিপাথর

by ইফতেখার সিফাত

   ⭐⭐⭐⭐⭐  (19)

TK. 230

TK. 173

Save TK. 57 (25%) on rokomari

সাপ্লায়ার জানিয়েছেন এই পণ্যটি 14 2022 March প্রকাশিত হতে পারে।

Product Specification Of Fahmus Salaf 

Titleফাহমুস সালাফ : দীন বোঝার কষ্টিপাথর
Authorইফতেখার সিফাত
Publisherসিজদাহ প্রকাশন
Qualityপেপারব্যাক
Edition1st Published, 2022
Number of Pages160
Countryবাংলাদেশ
Languageবাংলা
Product Summary...
ইসলামকে বিকৃত করে পশ্চিমা সভ্যতা ও মতাদর্শগুলোর সাথে সামঞ্জস্যশীল করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো সালাফে সালেহিনের মুতাওয়ারিস ফাহম। এজন্য পশ্চিমের প্রাচ্যবাদী বিভিন্ন সংস্থাও সালাফে সালেহিনের ফাহমের তিরস্কার করেছে। দীনের এই মুতাওয়ারিস ফাহম ও ইলমকে জড়, আবদ্ধ, পুরাতন, কট্টর ইত্যাদি শব্দে আখ্যায়িত করেছে। তা ছাড়া আমরা দেখব, সমস্ত ভ্রান্ত ফিরকাসহ পশ্চিমা সভ্যতা দ্বারা প্রভাবিত মডার্নিস্ট স্কলার ও মুসলিম দীনের মুতাওয়ারিস ফাহম ও মানহাজের তোয়াক্কা করে না; বরং তারা বিভিন্ন স্লোগান ও ভ্রান্ত যুক্তির আড়ালে মুতাওয়ারিস এই ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও গুরুত্বহীন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ফলে আধুনিক সময়ে সালাফে সালেহিন থেকে প্রাপ্ত মুতাওয়ারিস ফাহম ও মানহাজের ওপর যত প্রকার আঘাত আসছে এবং বিষয়টি কেন্দ্র করে যত প্রকার নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে, সেগুলো দমন করার জন্য বিষয়টি উম্মাহর সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই পরিবেশনা।

Read Before Buy Fahmus Salaf - Din Bojhar Kosti Pathor.

ইউরোপে সেকুলারিজমের উৎপত্তির পর সেখানকার সমাজে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে গির্জাকেন্দ্রিক এমন দুটি পরিবর্তন ঘটেছিল, যা সমাজ থেকে খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবকে একেবারে বিলুপ্ত করে দেয়। প্রথম পরিবর্তনটি হলো ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিভাজন, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। ধর্ম যে যার ব্যক্তিগত পরিসরে পালন করবে। এই বিভাজনের ফলে মানুষের সামাজিক ও সামষ্টিক জীবন থেকে ধর্মের প্রভাব বিলুপ্ত হতে থাকে। এই পরিবর্তনটি ছিল গির্জার সাথে সংশ্লিষ্ট, তবে গির্জার বাইরের বিষয়। এটাকেই ইউরোপের ইতিহাসে রেনেসাঁ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

দ্বিতীয় পরিবর্তনটি ঘটে গির্জার একেবারে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে। সেই পরিবর্তনটা ছিল ধর্মীয় টেক্সট ব্যাখ্যা অথরিটিকে অবাধকরণ। পোপদের অসততার সুযোগে মার্টিন লুথারের মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের ভেতর রিফরমেশন আন্দোলন শুরু হয়।' এই আন্দোলন আপাত পোপতন্ত্রের বিরুদ্ধে হলেও এটির ফলাফল ছিল ভয়াবহ।

৫. ১৬ শতকে গির্জাকেন্দ্রিক নানা সমস্যা থেকে খ্রিষ্টধর্মে প্রতিবাদপন্থি সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলনকেই রিফরমেশন আন্দোলন বলা হয়। এর মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টধর্মে একদমই নতুন একটি ধারা সৃষ্টি হয়। যাদেরকে ‘প্রোটেস্টান্ট’ নামে ডাকা হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে লেখকের অনূদিত রুহামা পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা বইটি পড়া যেতে পারে।

৬. ক্যাথলিক গির্জার একচ্ছত্র নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বকে ‘পোপতন্ত্র' বলা হয়। এই কর্তৃত্বের ভিত্তিতে এই আন্দোলনের ফলে খ্রিষ্টানদের ভেতর বিভাজন হয়ে প্রোটেস্টান্ট ধারার সূচনা হয়। এই আন্দোলন একদিকে খ্রিষ্টান ধর্মকে নতুন করে বিকৃত করে (যদিও আগ থেকেই খ্রিষ্টধর্ম বিকৃত হয়ে আসছিল) তার বিদ্যমান মূল কাঠামো ও প্রভাবকে ধ্বংস করে দেয়। অন্যদিকে ধর্মীয় টেক্সট, বিধান ইত্যাদিকে ব্যাখ্যা ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা সাধারণ থেকে বিশেষ—সবার জন্য অবাধ করে দেয়।

আমরা যদি উপরোক্ত দুটি বাস্তবতাকে মিলিয়ে আরও স্পষ্ট করে বলি, তবে বলতে হবে, ধর্মকে ব্যাখ্যা করা এবং বেঁধে দেওয়ার ক্ষমতা চলে আসে এমন রাজনৈতিক কর্তৃত্বের হাতে, যারা ধর্মকে তার বিধিবদ্ধতা ও যথাযথ মর্যাদাসহ গ্রহণ করতে আন্তরিক নয়। অল্প কথায়, একে সেকুলার অথরিটি বলা যায়। এখন সেই অথরিটি ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্র যে-কেউ হতে পারে। মোটকথা রিলিজিয়াস টেক্সটের ব্যাখ্যাপ্রণালি তার নিজ কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে সেকুলার মূল্যবোধের কাছে জিম্মি হয়ে যায়। এর ফলে ইউরোপে যেটা হয়, তা হলো, সেকুলার রাষ্ট্র কিংবা ব্যক্তি নিয়মিত খ্রিষ্টধর্মের বিধান ও আইনি কাঠামোকে পরিবর্তন করতে থাকে এবং কোনটা ধর্ম ও কোনটা ধর্ম না সেটাও তারা ঠিক করে দিতে থাকে।

এখান থেকে আমাদের সামনে এটাও স্পষ্ট হয় যে, সেকুলারিজম ঐতিহাসিক ও উৎপত্তিগতভাবে যে কাজটা আজ অবধি করে আসছে, সেটা তার প্রচলিত সংজ্ঞার সাথে মেলে না। সেকুলারিজম সব ধর্মকে স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলে ধর্মগুলোকে আসলে তার নিজের তৈরি একটি বাক্সের মধ্যে বন্দি করে দিচ্ছে এবং সে-ই ঠিক করে দিচ্ছে কোনটা ধর্ম আর কোনটা ধর্ম না, কোনটা ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা আর কোনটা সঠিক ব্যাখ্যা না, কোন জায়গায় ধর্ম চলবে আর কোন জায়গায় চলবে না। যাই হোক সেকুলারিজম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এখানে আমার উদ্দেশ্য না। ধর্মকে মনমতো ব্যাখ্যা কিংবা রিফরমেশন করার যে ধারা ইউরোপে জন্ম হয়েছিল, আমি এখানে তার মৌলিক রূপটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

গির্জার পোপরা খ্রিষ্টধর্ম শেখা, বোঝা ও পোপ হওয়ার অধিকারকে তাদের বিশেষ বংশ ও শ্রেণির মাঝে কুক্ষিগত করে রাখত। আধুনিক শিক্ষায় প্রভাবিত কোনো কোনো মুসলিম পোপতন্ত্রের সাথে ইসলামি ইলম অর্জনের সিলসিলাকে তুলনা করে থাকে। এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটি তুলনা। বইটির সংশয় নিরসন অংশে আমরা বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

ইউরোপ যখন মুসলিম দেশগুলোতে উপনিবেশবাদ' প্রতিষ্ঠা করে, তখন সে তার সভ্যতার সকল মতাদর্শ মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে যায়; কিংবা চুপিসারে অনুপ্রবেশ করিয়ে দিয়ে যায়। ফলে মুসলিম সমাজের ভেতর সেকুলারিজম তার উল্লিখিত সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রবেশ করে এবং মুসলিম সমাজের ওপর জেঁকে বসে। আর তখনই নতুন করে শরয়ি নুসুস বা টেক্সটকে নিজের মনমতো ব্যাখ্যা করা এবং নিজের মতো করে বোঝার নানা মাত্রিক প্রবণতা শুরু হয়। নানা মাত্রিক বলার কারণ হলো, কুরআন-সুন্নাহর নুসুসকে নিজের মতো করে বোঝা ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে যেসব প্রবণতার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, সেগুলোর অবস্থা একরকম নয়। প্রতিটি প্রবণতার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা না করে আমরা এমন একটি মৌলিক পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি, যা মূলত সবগুলো প্রবণতার মধ্যেই রয়েছে। তা হলো, শরয়ি নুসুস বোঝার ক্ষেত্রে সালাফদের ফাহম (বুঝ) ও মানহাজ (পদ্ধতি) উপেক্ষা করা। তথা সালাফরা যেভাবে কুরআন-সুন্নাহ বুঝেছেন এবং যে পদ্ধতি অনুসারে তা ব্যাখ্যা করেছেন, সে বুঝ ও ব্যাখ্যার পদ্ধতি থেকে সরে যাওয়া এবং তা উপেক্ষা করা।

কেউ কেউ সাধারণভাবেই সালাফদের ফাহম ও মানহাজকে প্রত্যাখ্যান করে, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তা উপেক্ষা করে থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এবং পরবর্তী সময়ে সালাফদের যুগ হয়ে প্রজন্ম পরম্পরায় শরয়ি নুসুসের (কুরআন ও হাদিসের) ধারাবাহিক যে জ্ঞান ও বুঝ আমরা লাভ করেছি, তাকে বলা হয় 'ইলমে মুতাওয়ারিস’ ও ‘ফাহমে মুতাওয়ারিস'। যুগে যুগে ইসলামকে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধ্যানধারণা ও বিকৃতি থেকে রক্ষা করেছে এই মুতাওয়ারিস ধারার নিরবচ্ছিন্ন ধারা। এই মুতাওয়ারিস ফাহমের ধারা মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ রহমত। মহান আল্লাহ এই মজবুত নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই তাঁর দীনকে সংরক্ষণ করে আসছেন। যেমনটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

৭. উপনিবেশবাদ বলা হয়, একটি দেশ কর্তৃক অন্য দেশে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। ১৭শ এবং ১৮শ এর দশকে ইউরোপ মুসলিম বিশ্বসহ পৃথিবীর আরও বেশ কিছু অঞ্চলে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। আমরা এখানে সে উপনিবেশের কথাই বলছি।

৮. নুসুসের সেব্যাখ্যা ও বুঝ, যা সাহাবিগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে আমাদের কাছে ধারাবাহিকভাবে

এসে পৌঁছেছে একটি বিশ্বস্ত মাধ্যম হয়ে।

يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله، ينفون عنه تحريف الغالين وانتحال المبطلين و تأويل الجاهلين.

‘এই উম্মতের প্রত্যেক প্রজন্মের নিষ্ঠাবান শ্রেণি দীনের এই ইলমকে বহন করবে। তারা দীনের ইলমকে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থিদের মিথ্যাচার ও মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে মুক্ত রাখবে।”

সুতরাং এই নেটওয়ার্ক ইসলামের একটি বৈশিষ্ট্যও বটে, যা অন্য কোনো ধর্মের নেই। এই কারণে ইসলাম ছাড়া বাকি সব ধর্ম খুব সহজেই বিকৃত হয়ে গেছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তাআলা ইসলামকে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত রাখবেন।

ইসলামের ইতিহাসে যত ভ্রান্ত চিন্তা ও ফিরকার জন্ম হয়েছে, সবগুলোর মূল সমস্যা ছিল এই জায়গাটিতে। দীনের মুতাওয়ারিস ইলম ও ফাহম থেকে বেরিয়ে যারাই কোনো নতুনত্বকে বরণ করতে চাইবে, তাদের জন্য সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া এক সুনিশ্চিত বিষয়। বর্তমানেও দীনি অঙ্গনে যত নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে, যত ফিকরি ইনহিতাতের (চিন্তাগত অধঃপতন) প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, দেখা যাবে সবগুলোর মূল সংকট এখানেই।

ইসলামকে বিকৃত করে পশ্চিমা সভ্যতা ও মতাদর্শগুলোর সাথে সামঞ্জস্যশীল করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো, সালাফে সালেহিনের মুতাওয়ারিস ফাহম। এজন্য পশ্চিমের প্রাচ্যবাদী বিভিন্ন সংস্থা ও সালাফে সালেহিনের ফাহমের তিরস্কার করেছে। দীনের এই মুতাওয়ারিস ফাহম ও ইলমকে জড়, আবদ্ধ, পুরোনো, কট্টর ইত্যাদি শব্দে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি তারা মডার্নিস্ট মুসলিমদেরকে এর বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত তৈরির জন্যও আহবান করেছে। এজন্য আমরা দেখব, সমস্ত ভ্রান্ত ফিরকাসহ পশ্চিমা সভ্যতা দ্বারা প্রভাবিত মডার্নিস্ট স্কলার ও মুসলিম দীনের মুতাওয়ারিস ফাহম ও মানহাজের তোয়াক্কা করে না; বরং তারা বিভিন্ন স্লোগান ও ভ্রান্ত যুক্তির আড়ালে মুতাওয়ারিস এই ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও গুরুত্বহীন করার অপপ্রয়াস করছে।

৯. মুসনাদুশ শামিয়িন, তাবারানি, হাদিস নং ৫৯৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকি, হাদিস নং-২০৯১১, সনদ সহিহ।

ফলে আধুনিক সময়ে সালাফে সালেহিন থেকে প্রাপ্ত মুতাওয়ারিস ফাহম ও মানহাজের ওপর যত প্রকার আঘাত আসছে এবং বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যত প্রকার নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে, সেগুলোকে দমন করার জন্য বিষয়টি উম্মাহর সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। সে লক্ষ্যেই আমরা এই বইটিতে সালাফদের পরিচয়, তাদের ফাহমের গুরুত্ব, প্রামাণিকতা এবং এর ওপর আপত্তিসমূহের নিরসন তুলে ধরার চেষ্টা করব। এ ক্ষেত্রে আমরা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করব না; বরং সামগ্রিকভাবে সাধারণত যেসব আপত্তি আসে এবং আমরা সচরাচর যেসব আপত্তির সম্মুখীন হই, সেগুলো উল্লেখপূর্বক নিরসন করার চেষ্টা করব।

বইয়ের মূল পাঠে যাওয়ার পূর্বে পাঠককে একটি বিষয়টি জানিয়ে রাখা সমীচিন মনে করছি। বইটির বিষয়বস্তু কিছুটা কঠিন। কারণ এটি একটি উসুলি তথা মূলনীতিধর্মী গ্রন্থ। বিষয়বস্তুর মূলভাব রক্ষা করে আমি সাধ্য অনুযায়ী সহজ করার চেষ্টা করেছি। তবে বিষয়টি যেহেতু চিন্তার, তাই পাঠককে একটু মনোযোগ ও চিন্তার সাথেই পড়তে হবে। সামান্য চিন্তা করে আমরা যদি দীনের এই কষ্টিপাথরকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে বুঝে নিতে পারি, তাহলে আমাদের চিন্তার জগতে একটি দুর্গ প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করি। যে থেকে আমরা চিন্তার ময়দানের সকল আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারব এবং নিজেদের চিন্তাকাঠামোকে ভ্রান্তির আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারব।

বইটি লেখার ক্ষেত্রে আমি বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ থেকে উপকৃত হয়েছি। এর মধ্যে হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলি থানবি রহিমাহুল্লাহর আল ইন্তিবাহাতুল মুফিদাহ, আল্লামা তাকি উসমানি হাফিজাহুল্লার ইসলাম আওর জিদ্দাত পছন্দি ও বিভিন্ন প্রবন্ধ এবং শায়খ ফাহাদ বিন সালেহ আল আজলান হাফিজাহুল্লাহর বিভিন্ন প্রবন্ধ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বইটির মৌলিক কাঠামো গ্রহণ করেছি ফাহমুস সালাফ লিন নুসুসিশ শরইয়্যাহ ওয়ার রদ্দু আলাশ শুবহাতি হাওলাহু নামক গ্রন্থ থেকে। এই গ্রন্থের বেশ কিছু আলোচনার সাথে আমি একমত নই এবং বইটিতে সামগ্রিকভাবে কিছু বিষয়ের শূন্যতাও অনুভব করি। যার দরুন গ্রন্থটির হুবহু অনুবাদ করার পরিবর্তে আমি তা সামনে রেখে উপযুক্ত সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন বোধ করি এবং সেই বোধ থেকে বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি প্রস্তুত করি।

মানুষ হিসেবে কখনোই বইটির কোনো আলোচনাকে আমি ভুলের ঊর্ধ্বে মনে করি না। বিজ্ঞ পাঠকের চোখে যৌক্তিক কোনো ভুল প্রকাশ পেলে অবশ্যই লেখক কিংবা প্রকাশনীকে অবগত করার অনুরোধ থাকবে। আমরা দালিলিক ও যৌক্তিক আপত্তি পেলে অবশ্যই সেই ভুল সংশোধন করে নেব, ইনশাআল্লাহ।

মুহতারাম মাওলানা আফসারুদ্দীন হাফিজাহুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মাদ মাসরুর, মাওলানা ইমরান রাইহান, মাওলানা সাজ্জাদ হুসাইন, মাওলানা কায়েস শরীফ, মাওলানা হুসাইন আহমাদ—সম্মানিত এই মানুষগুলোর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সম্পাদনা, নজরে সানি, প্রুফ দেখাসহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে বইটিকে প্রকাশযোগ্য করে তুলতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের খেদমত কবুল করে নেন এবং বইটির মাধ্যমে উম্মাহর ভেতর স্বর্ণযুগের চিন্তাচেতনা ও আদর্শ পুরুজ্জীবিত করে দেন। আমিন।

(ইফতেখার সিফাত
১৬ জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩)

   ফাহমুস সালাফ পরিচিতি

ফাহম শব্দের অর্থ

ফাহম-এর শাব্দিক অর্থ হলো, অন্তর দিয়ে কোনো জিনিসকে বোঝা।

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ফাহম হচ্ছে এমন বোধ-বুদ্ধি, যার মাধ্যমে ব্যক্তি অন্যের বক্তব্যকে সংশ্লিষ্ট বিষয়সহ বুঝতে পারে। ১১ ফাহম, ইলম, ফিকহ এই শব্দগুলো কাছাকাছি অর্থ ধারণ করে। তাফসির শব্দটিও ফাহমের অন্তর্ভুক্ত। প্রজন্ম পরম্পরায় লেখা ও বর্ণনার মাধ্যমে যে তাফসির ও তাফসিরগ্রন্থ আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তা সালাফদের ফাহমেরই একটি অংশ, তবে পরিপূর্ণ অংশ নয়। কারণ এর বাইরেও সালাফদের আরও ফাহম আছে, যা ফিকহ ও হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোতে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।

ফাহম দুই প্রকার : বিধানগত ফাহম ও চিন্তাগত ফাহম

বিধানগত ফাহম হলো, যার মাধ্যমে দলিল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যার থেকে শরয়ি বিধান আহরণ করা হয়। এ ধরনের ফাহম অর্জনের ক্ষেত্রে ঈমান ও তাকওয়ার

১০. লিসানুল আরব, ১২/৪৫৯ ১১. ফাতহুল বারি, ১/১৯৯

পাশাপাশি নুসুস আসার প্রেক্ষাপট, অন্যান্য নুসুস বিবেচনা, ভাষাজ্ঞান, মুফাসসিরে কেরাম, মুহাদ্দিসিনে কেরাম ও ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্য ইত্যাদি বিষয় সহায়ক হয়ে থাকে।

আর চিন্তাগত ফাহম হলো, প্রথমোক্ত ফাহম থেকে গভীর চিন্তাভাবনার মাধ্যমে যে সূক্ষ্ম জ্ঞান হাসিল হয়। এ ধরনের ফাহমকে আমরা সাধারণত তাদাব্বুর হিসেবে চিনে থাকি। এমন ফাহম অর্জনের ক্ষেত্রে চিন্তার গভীরতা, হৃদয়ের স্বচ্ছতা ও ঈমানি মজবুতির প্রয়োজন হয়।

সালাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ 

শাব্দিক অর্থের সাথে সংশ্লিষ্টতা রেখেই প্রতিটি পরিভাষা তৈরি হয়। সালাফ-এর শাব্দিক অর্থের সাথে পারিভাষিক অর্থের একটি সম্পর্ক আছে। এজন্য আমরা আগে সালাফ-এর শাব্দিক অর্থ জেনে নেব।

সালাফ-এর শাব্দিক অর্থ গত হওয়া।” একই শব্দ যখন ইসমুল ফায়েল তথা কর্তা অর্থে ব্যবহার হয় তখন এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয়— বাপদাদা ও আত্মীয়স্বজনদের ভেতর থেকে যারা গত হয়েছেন এবং যারা বয়স ও সম্মানে আমাদের থেকে অগ্রগামী। অর্থাৎ যারা আমাদের থেকে বয়সে ও জমানার দিক থেকে ওপরে, তাদের প্রত্যেকেই শাব্দিকভাবে আমাদের জন্য সালিফ বা সালাফ। ১৪

মোটকথা, সালাফ শব্দের যতগুলো ব্যবহার আছে, প্রায় সবগুলোর মাঝেই অতীত ও বিগত সময়, কিংবা পূর্ববর্তী প্রজন্ম—এ জাতীয় অর্থ পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনেও এ অর্থে সালাফ শব্দটি এসেছে। যেমন :

১২. মূলত ফাহমের এই দ্বিতীয় প্রকারটিই কিয়ামত পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। এই ফাহমের জগতে কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন তার রহস্য ভাণ্ডার চিন্তাশীলদের কাছে উন্মোচন করে যাবে। এমনকি পরবর্তীরা এমন কোনো ফাহমও উদ্ধার করতে পারে, যা পূর্বের কেউ পারেনি। তবে দ্বিতীয় প্রকার এই ফাহমের সাথে বিধানের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তা বিশুদ্ধ ও নিরাপদ হওয়ার জন্য জরুরি হলো, প্রথম প্রকার ফাহমকে সামনে রাখা। অর্থাৎ প্রথম প্রকারের ফাহম কারও অর্জন না হলে তার দ্বিতীয় প্রকারের ফাহমের ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ঘটবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই।

১৩. মুজামু মাকায়িসিল লুগাহ লি ইবনি ফারিস, ৩/১৫

১৪. লিসানুল আরব, ৯/১৫৯

قل للذين كفروا إن ينتهوا يغفر لهم ما قد سلف " وإن يعودوا فقد مضت سنت الأولين.

‘(হে নবি!) যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তাদেরকে বলে দাও, তারা যদি নিবৃত্ত হয়, তবে অতীতে যা কিছু হয়েছে তা ক্ষমা করে দেওয়া হবে। কিন্তু তারা যদি পুনরায় সে কাজই করে, তবে পূর্ববর্তী লোকদের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে, তা তো (তাদের সামনে) রয়েছেই।

● অতীত সম্প্রদায়

فجعلتهم سلفا و مثلا للأخرين.

‘আর তাদেরকে আমি এক বিগত জাতি এবং অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত বানিয়ে দিলাম। ১৯

অনুরূপ হাদিস শরিফেও সালাফ শব্দের ব্যবহার এসেছে। যেমন এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মৃত্যু ঘনিয়ে আসার সংবাদ হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শোনাতে গিয়ে বলেন,

نعم الشلف أنا لك .

‘আমিই তোমার জন্য সর্বোত্তম অগ্রগমনকারী।’

পারিভাষিক অর্থ

পারিভাষিকভাবে সালাফ শব্দের দুটি প্রয়োগক্ষেত্র আমরা তুলে ধরতে পারি।

এক. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু-পরবর্তী (শ্রেষ্ঠ তিন প্রজন্মের) নির্দিষ্ট সময়ের ওপর সালাফ শব্দের প্রয়োগ। এটিই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও ব্যবহৃত প্রয়োগ। এ ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয় উত্তম জমানাকেন্দ্রিক

১৫. সুরা আনফাল, আয়াত ৩৮

১৬. সুরা জুখরুফ, আয়াত ৫৬

১৭. সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬২৮৫

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস। তিনি বলেন,

خير القرون قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم.

‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো আমার প্রজন্ম, অতঃপর তাদের পরবর্তী প্রজন্ম, এরপর তাদের পরবর্তী প্রজন্ম। ১৮

এই হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের যুগ ও পরবর্তী দুই যুগকে পর্যায়ক্রমে শ্রেষ্ঠ যুগ বা প্রজন্ম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ফলে জমহুর উলামায়ে কেরাম সাহাবি, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়ি—এই তিন প্রজন্মকে হাদিসে বর্ণিত শ্রেষ্ঠত্বের অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন, খাইরুল কুরুনের সময়টি তাবেয়িদের পর্যন্তই নির্দিষ্ট। আবার কেউ কেউ একটু পিছিয়ে খাইরুল কুরুনকে কেবল সাহাবিদের যুগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করেন। অন্যদিকে পাঁচশ হিজরির পূর্ব পর্যন্ত খাইরুল কুরুন সম্প্রসারিত করার ব্যাপারেও কারও কারও মত পাওয়া যায়। এগুলো হলো কিছু আলেমের অভিমত। কিন্তু যুগ যুগ ধরে অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম গ্রহণযোগ্য মতানুসারে হাদিসে বর্ণিত বিন্যাস অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িদের প্রজন্মকে শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন।

প্রকৃতপক্ষে খাইরুল কুরুনের সময়ের ব্যাপ্তি জানার জন্য আমাদেরকে হাদিসে বর্ণিত ‘করনুন’ (3) শব্দটির ব্যাখ্যা জানতে হবে। করনুন এর শাব্দিক অর্থ হলো, জমানার নির্দিষ্ট সময়। আর ইবনুল আসির রহিমাহুল্লাহর মতে করনুন মানে হলো, প্রত্যেক জমানার অধিবাসীরা। ২০

পারিভাষিক অর্থে করনুন শব্দ নিয়ে মৌলিকভাবে দুটি অভিমত রয়েছে।

১. প্রথম অভিমতের পক্ষের ভাষাবিদদের মতে করনুন বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়-কালকে বোঝায়। তাদের মধ্যে করনুন-এর সময়ের ব্যাপ্তি নিয়ে ১০ বছর থেকে ১২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মতামত রয়েছে। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মত হলো, ১০০ বছরে এক করনুন হয়। এই মতের পক্ষে হাদিসেরও দলিল আছে। সাহাবি

১৮. সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৬৫১; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৩৫

১৯. তাহযিবুল আসমা ওয়াল লুগাত, ৩/২৬৯

২০. আন নিহায়াহ, ৪/৫১

আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। 
Buy From Rokomari.com Or Wafilife Book Shop 
অনুরোধঃ- বই : ফাহমুস সালাফ : দীন বোঝার কষ্টিপাথর
 এর প্রি অর্ডার চলছে ... তাই  ফাহমুস সালাফ : দীন বোঝার কষ্টিপাথর বইটি PDF Free Download চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না।
We Respect Every Author Hardwork - boipaw.com™

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ