[PDF] কুররাতু আইয়ুন - যে জীবন জুড়ায় নয়ন, লেখক : ডা. শামসুল আরেফীন | Kurratu Ayyun - Je Jibon Juray Noyon pdf - Dr. Shamsul

Get Results কুররাতু আইয়ুন ১ pdf কুররাতু আইয়ুন 2 কুররাতু আইয়ুন রিভিউ কুররাতু আইয়ুন অর্থ কি কুররাতু আইয়ুন ২ pdf download

কুররাতু আইয়ুন pdf - যে জীবন জুড়ায় নয়ন
লেখক : ডা. শামসুল আরেফীন

প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আসলাফ
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন, বিয়ে, সন্তান প্রতিপালন
সম্পাদক : আব্দুল্লাহ আল মাসউদ
কভার : পেপার ব্যাক

         কুররাতু আইয়ুন বই রিভিউ

“পাঠ্যপুস্তক আমাদের শুধু ভালো কেরানী আর পুঁজিবাদের সেবক হওয়া শেখায়। যেন চাকরিগিরির ক্যারিয়ারই সব। টাকা কামানোই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। আমাদের প্রচলিত শিক্ষা যদি ভবিষ্যত জীবনের জন্য আমাদের গড়ে তোলার’ই দাবী করে, তবে ভালো চাকুরের সাথে ভালো স্বামী, ভালো বাবা কিংবা ভালো সন্তান হওয়ার সিলেবাস কোথায়? তার মানে ওরা আপনার সুন্দর জীবন চায় না, চায় শুধু আপনার সুন্দর সার্ভিস টুকু। ষাট বছর হলে ছিবড়ে ফেলে দেবে ছুঁড়ে, ব্যস” ___কুররাতু আইয়ুন
.
★বিষয়বস্তুঃ
প্রফেশনালরা আপনার জীবনের সৌন্দর্যের পূজারী নয়। তারা শুধুমাত্র আপনার সার্ভিসিং নিয়েই তটস্থ। আপনার ছেলে মানুষ হলো কিনা, মেয়ে বিপথে চলে গেলো কিনা তা দেখা তাদের বিষয়বস্তুর মধ্যে পড়েই না। আপনার ডিভোর্সে তাদের কিচ্ছু আসে যায় না কিংবা আপনার মা-কে বৃদ্ধাশ্রমে কেন পাঠালেন তার কৈফিয়ত ও চাইতে আসবে না। স্রেফ আপনার কাজ নেওয়ার জন্যই তাদের এত রঙচঙা আয়োজন, এত এত….
এই বইটি আমাদের সিলেবাসের সেই অসূর্যম্পশ্যা অংশটুকু নিয়েই, যেগুলো কখনো আলোর মুখ দেখে নি।
সহজে বলা যেতে পারে, নয়ন জুড়ানো জীবনের সাবলীল প্রেশক্রিপশান। অতি সূক্ষ্ম চিন্তাধারা আর লেখকের অসাধারণ জীবনদর্শনকে গৎবাঁধা প্রবন্ধে মলাটবদ্ধ না করে বরং লেখক একে প্রাণবন্ত আড্ডার মতো করে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। যেন লেখক বলে চলেছেন আর আমরা শুনছি। বর্তমান পরিবার আর গুণে ধরা সমাজব্যবস্থার সমস্যাগুলোর সূক্ষ্মতম দিকটিও চিহ্নিত করে দেখিয়েছেন, যেসব নিয়ে আমাদের ভাবারই ফুরসত হয় না। সেইসাথে যুগপৎভাবে দেখিয়েছেন কুরআন-হাদিসের আলোকে যুগোপযোগী সমাধানের আলোকবার্তিকা।
.
ভূমিকা সহ বইটিতে মোট ১১টি টপিক
নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক। প্রতিটি টপিকের সাবলীল আলোচনা আর লেখকের নিজের জীবনের সাদৃশ্যতার সাথে সুকৌশল উপস্থাপন বইটির বিশেষত্ব আরো কয়েক চামচ বাড়িয়ে দিয়েছে।
.
★সারসংক্ষেপঃ
প্রথম টপিকটি হলো পরিবারের দাওয়াহ নিয়ে। গোড়াতেই লেখক তার দেখা একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন যেটি পরিবারের দাওয়াহ’র বিষয়টি আরো সুগভীর উপলব্ধির হেতু হয়ে যায়। আমরা অনেকেই বাইরে দাওয়াহ’র কাজে ভীষণ সচেতন। কিন্তু পরিবারের দাওয়াহ’র বিষয়ে বেখেয়াল অথবা কোথা থেকে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারিনা। এই টপিকটি পড়লে আপনি আপনার সমাধান পাবেন ইনশাআল্লাহ। লেখক বিভিন্ন আঙ্গিকে চমৎকার কিছু কৌশল অবলম্বন করেছেন।
পৃথক পৃথকভাবে পিতামাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান সন্ততির মনোজগৎ বিশ্লেষণ করে দাওয়াহ’র কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন।

পরবর্তী টপিকে বিয়ে নিয়ে আলোচনা। আজকালকার বিয়ে মানেই ফ্যান্টাস্টি তথা ফিতনা! নিজেদের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে আমরা পশ্চিমা ও হিন্দুয়ানী রুসুমের দিকে ঝুঁকে পড়েছি। এত্তোসব রেওয়াজের ভিড়ে তাই আজ পাত্রীর বাবারা কন্যা দায়গ্রস্ত আর পাত্রপক্ষ যৌতুক আর দেনাপাওনার লোভে বিভৎস!
অথচ, ইসলামে বিয়ে কত সহজ আর চক্ষুশীতলকারক। আমরাই আজ বিয়েকে কঠিন করে ফেলেছি, তাই তো চারিদিকে হারাম সম্পর্ক আর জিনার ছড়াছড়ি।
লেখক এই টপিকে ইসলামিক্যালি বিয়ে নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিয়ের চেষ্টা ও নিয়ত, পাত্র-পাত্রী নির্বাচন, যৌতুক পরিহার, মাহর, পর্দা সহ বিয়ের সর্ববিষয় আলোচনা করেছেন। ‘মসজিদে বিয়ে’ কিংবা ‘খেজুর ছিটানো’র- মতো কিছু হারিয়ে যাওয়া সুন্নাহ’র কথা তুলে ধরেছেন
.
তৃতীয় টপিকটির শিরোনামঃ “বরফ গলবেই”!
এটা হলো পরিবারের অধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশটি। বর্তমানে পারিবারিক মেলবন্ধনের অভাব পবিত্র সম্পর্কগুলোকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই বইছে অশান্তির কালোবাতাস। এর কারণ ও প্রতিকারের বিষয়টিই হচ্ছে এই টপিকের আলোচ্য বিষয়।
ভাইয়েরা কিভাবে মা ও বউয়ের মাঝে ব্যালেন্স রেখে সংসার চালাবেন, বোনেরা কিভাবে শাশুড়ীর মন জয় করবেন, এমনকি শশুড়-শাশুড়ীরা কিভাবে সবকিছু মেইনটেইন করবেন, তারই সুস্পষ্ট ও চমৎকার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন লেখক এই অংশে।

এর পরের আলোচ্য বিষয় সন্তান জন্মের আগে ও পরে মায়ের করণীয় বিষয়াবলী। সন্তান জন্মের আগেই সন্তানের তারবিয়াহ শুরু হয়। তাই গর্ভকালীন সময় মায়েরা কি কি আমল করবেন তথা সন্তানকে কি কি শেখাবেন, তার পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। যুগপৎ মেডিক্যাল সাইন্স ও ইসলামিক্যালি প্রসূতি মায়েদের যত্ন,খাবারদাবার গর্ভকালীন ও গর্ভপরবর্তী করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াদির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।
.
এরপরে কবি মানবশিল্পীদের গান গেয়েছেন। নিশ্চয়ই ভাবছেন মানবশিল্পী কারা?
আপনার ঘরে মমতাময়ী মা কিংবা আপনার আপনার স্ত্রী-ই আপনার উত্তর, যারা গৃহস্থালীর প্রতিটি কর্ম প্রত্যহ নিখুঁত ভাবে করে। যার নিপুণ হাতে গড়ে উঠে পৃথিবীর নিপুণতম শিল্প। লেখক তার নাম দিয়েছেন মানবশিল্প।
লেখক আহবান করেছন ভোগবাদীর দাসত্ব থেকে বেরিয়ে এসে দুনিয়া দেখতে। ক্যারিয়ারিজম কখনোই ঐতিহ্যবাহী মানবশিল্পের আরাধ্য হতে পারেনা। ইসলাম নারীদের আয় করার সুযোগ দিয়েছে, তবে তা নিজস্ব সত্তাকে ভুলে নয়। এই মানবশিল্পের খাতিরেই ইসলাম নারীদের অব্যহতি দিয়েছে রোজগারের বাধ্যবাধকতা, যুদ্ধের দায়িত্ব কিংবা শাসন থেকে!
নারীবাদীর চক্করে নিজ শিল্পকে বেখেয়াল বুয়ার হাতে তুলে দিয়ে আনফিট একটা প্রজন্ম গড়ার জবাবদিহি নারীরা কিভাবে করবে? সেটাই সময়ের দাবী।

৬ষ্ঠ টপিক সন্তানের তারাবিয়াহ নিয়ে। সন্তানের দীক্ষার ব্যাপারে আজকাল মা-বাবারা উদাসীন বলা চলে। বুঝতে শিখার আগেই কিন্ডারগার্টেনে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেরা বেমালুম বেখেয়াল হয়ে যায়। এই টপিকে সন্তানদের দীক্ষাগুরু হয়ে মা-বাবার করণীয় পদ্ধতিগুলোই হাইলাইট করেছেন লেখক।
.

এর পরের টপিকটি সমাজের সেই অংশটিকে নিয়ে, যারা দ্বীন সম্পর্কে বেখবর! এদের দুনিয়ার মোড়কে দীন গিলানোর অসাধারণ ও ভিন্ন কর্মপন্থার উল্লেখ করেন লেখক। আমরা মাদ্রাসাকে ইসলামিক শিক্ষা অর্জনের একমাত্র উৎস হিসেবে মনে করি। অথচ একটা বৃহৎ অংশ, যারা কিনা জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। তাই লেখক প্রস্তাব করেছেন দ্বীনী স্কুল-কলেজ, দ্বীনী হাসপাতাল দ্বীনী মার্কেট তৈরী করার যেগুলো এই বেখেয়াল অংশটা ব্যবহার করে। এতে করে দুনিয়ার মোড়কে এদের ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো জানানোর কাজ হয়ে হয়ে যাবে।
.
এরপরের টপিক নাস্তিক্যবাদ নিয়ে। নাস্তিক্যবাদ বর্তমানের বহুল আলোচিত বিষয়ের মধ্যে একটি। এদের ভিত্তিহীন ও আক্রমণাত্মক কথাবার্তার জবাব না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন লেখক। আর যারা জানতে আগ্রহী, তাদের লিংক, বই ইত্যাদি দেওয়ার সাজেস্ট করেছেন। সাথে আরো অনেকগুলো টিপস ও দিয়েছেন।

পরের টপিকটি হলো অর্থময় জীবন। নিজের আখলাক দ্বারা অন্যকে প্রভাবিত করার ভূমিকা যে কতটা ফলদায়ক তা’ই এখানে আলোচ্য। দাওয়াহ’র ক্ষেত্রে একজন দাঈ’র ধৈর্য্য আর নমনীয়তা কিভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে, তার বাস্তব উদাহরণ হিসেবে লেখক দেখিয়েছেন মুফতী তালহার দাওয়াতের সাফল্য। নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন আপনার আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে মানুষ আপনার সান্নিধ্য কামনা করে। দ্বীন এমনই, যা কিনা মানুষকে পাগল করে দিতে পারে যেমনটি মহামানব নবীজি (সঃ) এর আখলাকের গুণে মুমিন-মুশরিক সবাই পাগল ছিলো। লম্বা বয়ানে বোঝানোর জিনিস না, দেখানোর জিনিস। ঠিকঠাক দেখিয়ে দিতে পারলেই কেল্লাফতে!
লেখক বলেন, নিশ্চয়ই এ দ্বীন বিজয়ী হওয়ার জন্য এসেছে। দেখার বিষয় এটাই যে, এই বিজয়ে আপনার-আমার ভূমিকা কতটুকু!
.
সর্বশেষে লেখক একজন অমুসলিমের প্রশ্নের যৌক্তিক ও আবেগী উত্তর দিয়েছেন। প্রশ্নোত্তরের ভূমিকক শেষে লেখক বলেন, অন্য ধর্মমত তিনি সম্মান করেন না, আবার অবমাননাও করেন না। কিন্তু একটা কুকুর বিড়ালে পুড়তে থাকলে,তাকে বাঁচানো মানবতার দাবী! সেখানে আমারই অমুসলিম ভাই ভুল উত্তরের কারণে নরকের ৭০ গুণ তেজের আগুনে পুড়বে, এটা আমরা কিভাবে সহ্য করি?
আরো দু’ চামচ আবেগ মিশ্রিত করে দেন লেখক শেষটায়, “এবার বলুন, দাওয়াত কি অপমান, নাকি আকুতি-সম্পর্কের দাবী-শেষ চেষ্টার আবেগ?
.

★বই সম্পর্কে কিছু কথাঃ
– ১১৮ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট বইয়ে আছে নয়ন জুড়ানো জীবন প্রাপ্তির মূল্যবান সব থিওরী। আপনি বইটি পড়বেন আর নিজেদের জীবনের অন্তঃসারশূন্যতার কথা উপলব্ধি করবেন, সেই সাথে পেয়ে যাবেন পরিবর্তনের আলোকছটা; একটা কম্পলিট গাইডলাইন।

-বইয়ের ফুডনোটে টীকা ব্যবহার আলোচনাকে আরো বোধগম্য করেছে। সেইসাথে লেখকের শব্দচয়নের বৈচিত্র্যতা আর পটু লিখনশৈলী প্রসঙ্গ’কে আরো উপভোগ্য করে তুলেছে।

– বইয়ের প্রচ্ছদটা ভীষণ সুন্দর। প্রচ্ছদ দেখেই যে কারো পড়তে ইচ্ছে করবে বইটা।
সম্পর্কের বন্ধনের মতো কুররাতু আইয়ুন-কে দুটো সেফটিপিন আটকে রেখেছে একত্রে আর উপর দিয়ে বইছে রহমতের বারিধারা। মাশাআল্লাহ ♥

– বইয়ের বাইন্ডিং যথেষ্ট ভালো ও পেপারব্যাক কোয়ালিটির।

★নেতিবাচক দিকঃ
– বস্তুত, বইটি অনেকাংশেই ফেইসবুকীয় স্টাইলে লেখা, যেটা লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন। তাই, সাধারণ মানুষরদের কিছু বিষয় সাবলীলভাবে বুঝাটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে! আর, দু-একটি বানান ভুল (হয়তো টাইপিং মিসটেক) ছাড়া সবকিছুই আকর্ষণীয় বইটার।
.
★শেষকথাঃ
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই বইটি পড়ার অনুরোধ সবাইকে। আল্লাহ আমাদের দ্বীনী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন।
.
★রেটিং- ১০/৯
💕Credit Of this review - Mahira – March 11, 2020:

  কুররাতু আইয়ুন শব্দের অর্থ

'কুররাতু আইয়ুন' দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত শব্দ, এর একটি হলো কুররাতু যার অর্থ হলো ‘শীতলতা, প্রীতিকর বা শান্তি। অপর শব্দটি ‘আইয়ুন’ যার অর্থ চোখ বা নয়ন। শব্দ দুটির একত্রে অর্থ হয় নয়ন প্রীতিকর।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ