নিঃসঙ্গ ঈশ্বর : সমীরণ দাস (সম্পূর্ণ বই রিভিউ) Ni'Shongo Isshor Shomiron Das

নিঃসঙ্গ ঈশ্বর : সমীরণ দাস (সম্পূর্ণ বই রিভিউ) Ni'Shongo Isshor Shomiron Das

"তোমার হাত কাঁপছে কেন ঈশ্বর ? মনের মধ্যে অস্থিরতা , বিপন্নতা ও পরাজয়ের গ্লানি ? বুকের মধ্যেও থর থর করে কাঁপছে , শূন্য হয়ে যাচ্ছে চারিদিক। মনে হচ্ছে , সব কিছুই যেন মায়া , অবাস্তব , অর্থহীন। সারা জীবন এত লড়াই করলে কীসের জন্য ? কাদের জন্য ? অন্যদের কথা বাদ দাও , সব থেকে কাছের মানুষও যখন দূরের মানুষ হয়ে যায় , তখন কি মনে হয় না , বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই ? কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে অর্জুনেরও কি এই রকম মনে হয়েছিল ? কে জানে ! তাঁর তো একজন শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন , তোমার তো কেউ নেই ! কে তোমার পাশে দাঁড়াবে ? পরামর্শ দেবে ? কিন্তু সত্যিই কি তোমার পরামর্শ দরকার ঈশ্বর ? তুমিই তো সারাজীবন সকলের মনোবল জুগিয়ে এসেছ , পরামর্শ দিয়ে এসেছে , তাহলে আজ কেন নিজেই নিজেকে পরামর্শ দিতে পারছ না ? তোমার মতো দৃঢ়চেতা মানুষের কি এই দুর্বলতা শোভা পায় ? তুমিই তো এক সময় অপমানের শোধ তুলতে চেয়ারে বসে হিন্দু কলেজের প্রিন্সিপাল ক্যর সাহেবের নাকের সামনে জুতা পরা পা তুলে দিতে ভয় পাওনি , তাহলে আজ কেন শুধু হাত-পা নয় , সমস্ত অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে তোমার ?"
-----
বিদ্যাসাগরের জীবনের শেষ কুড়ি বছরের একাকিত্ব নিয়ে লেখা "নিঃসঙ্গ ঈশ্বর" উপন্যাসের শুরু। শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। প্রকাশক অভিযান পাবলিশার্স। প্রচ্ছদ পার্থপ্রতিম দাস।

লেখকের কলমে :- সবাই কেবলই করোনা নিয়ে লিখছেন। আর ভালো লাগছে না , যা হয় হবে। বাঁচলে বাঁচব , মরলে মরব , নিজের কাজ বন্ধ করব না। একটা ভিন্ন রকম লেখা এখন লিখছি।
  কিছুকাল যাবৎ বিদ্যাসাগরের ডুবে আছি ও নতুন নতুন বিষয় জানতে পারছি। বিদ্যাসাগরের মতো নীতিনিষ্ঠ মানুষও বৃহত্তর স্বার্থে একবার আপস করতে বাধ্য হয়েছিলেন। যদিও বিধবার সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিলেন। উইলেও রাখেননি তার নাম। সামান্য অর্থের হিসাব না দিতে পারার জন্য জামাতাকে করেছিলেন মেট্রোপলিটন কলেজের চাকরি থেকে বরখাস্ত।
প্রথম বিধবা বিবাহ বিবাহের আয়োজন চলছে। কনে বর্ধমানের কালীমতি ও বর বিদ্যাসাগরের পরিচিত শ্রীশচন্দ্র। শ্রীশ চাকরি করতেন মুর্শিদাবাদে। তিনি কালীমতি ও তার মাকে নিয়ে এলেন বর্ধমান থেকে। কিন্তু আচমকা বেঁকে বসলেন শ্রীশের মা। গলায় ছুরি ধরে ছেলেকে বললেন , তুই বিধবা বিয়ে করলে আমি আত্মহত্যা করব। বাধ্য হয়ে শ্রীশ বিদ্যাসাগরকে বললেন , আমি এই বিয়ে করতে পারব না।
  কালীমতিকে নিয়ে তার মা পড়লেন গভীর সঙ্কটে। উপায়ান্তর না দেখে সুপ্রিম কোর্টে শ্রীশের বিরুদ্ধে ঠুকে দিলেন চল্লিশ হাজার টাকার মানহানির মামলা। মামলায় শ্রীশের পরাজয় ছিল অনিবার্য। যেজন্য তিনি বাধ্য হলেন বিয়ে করতে। কিন্তু শর্ত দিলেন দুটি। বিয়ের পর ওঁর জন্য ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে ও দিতে হবে এক হাজার টাকা। শর্ত শুনে ভয়ঙ্কর রেগে গেলেন বিদ্যাসাগর। এতো ঘুষের বিনিময়ে বিয়ে , তাঁর পক্ষে এই শর্ত কিছুতেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
তবুও হয়েছিল বিয়ে। তখন প্রায় ছয়মাস পেরিয়ে গেছে বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়নের পর। অথচ একটাও বিয়ের ব্যবস্থা করা যায়নি।
  অন্যদিকে বিধবা বিবাহের ঘোর বিরোধী রাজা রাধাকান্ত দেব বড়লাটের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন , ছমাসেও একটা বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি অর্থাৎ দেশের মানুষ চায়না বিধবা বিবাহ। সুতরাং বাতিল করা হোক বিধবা বিবাহ আইন।
বিদ্যাসাগর পড়লেন মহা সঙ্কটে। একদিকে নীতি , আদর্শ। অন্য দিকে হাজার হাজার বিধবার জন্য প্রনয়ণ করা বিধবা বিবাহ আইন। তিনি কোনটাকে বেছে নেবেন ? এই মুহূর্তে আর কোনো পাত্রও কাছে নেই , যার সঙ্গে কালীমতির বিয়ে দিয়ে আইন রক্ষা করা যায়। বাধ্যত তিনি আপস করলেন ও শ্রীশের শর্তে রাজি হলেন। 
এই রকম কোনো আপস বিদ্যাসাগর সারা জীবনে আর করেননি।


ঘুম আসছে না বিদ্যাসাগরের, অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ঈশ্বর, কেন তুমি এইসব করে বেড়াও? ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে কী লাভ?
কী লাভ আমি জানি না, শুধু একটা কথাই জানি, মানুষের দুঃখে আমার প্রাণ কাঁদে। ওদের কান্না আমার সত্তার মধ্যে ধ্বনিত হয়। চোখে জল চলে আসে, আমি উন্মাদ হয়ে যাই। পারি না নিজেকে স্থির রাখতে। অনেকেই হয়তো পারেন, কিন্তু আমি পারি না। কেন পারি না, এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। হয়ত এটা আমার জন্মার্জিত প্রবণতা। আমার নিয়ন্ত্রক। আমাকে সারাজীবনই বহন করতে হবে এই প্রবণতার অভিঘাত।

কুলীন ব্রাহ্মণ অতিবৃদ্ধ শম্ভুনাথ বাচষ্পতি ও তার অতিতরুণী বধূর কথা মনে পড়ে। এক ঝলক সেই কিশোরীর মুখ দেখেই হাহাকার জেগেছিল বুকের মধ্যে। আর কিছুদিন পরেই এই বালিকা বিধবা হবে। সে জানতেই পারবে না, বেঁচে থাকার অর্থ কী! দাম্পত্য জীবনের আনন্দ কী! প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এইসব মেয়েদের মুখে আমি হাসি ফোটাবোই।বাচষ্পতির বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় বলে এসেছিলাম, এই ভিটেয় আমি আর কখনোই জলস্পর্শ করব না।
আমি রেখেছি সেই প্রতিজ্ঞা।

একটা খবর পেয়ে অস্থির হয়ে পড়লেন বিদ্যাসাগর। তাঁর একমাত্র পুত্র নারায়ণচন্দ্র অন্যায় ভাবে বিন্ধ্যবাসিনী দেবী নামে এক বিধবার বাড়ি দখল করার চেষ্টা করছে। স্ত্রীর গায়ে হাত দেওয়ার জন্য নারায়ণের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন বিদ্যাসাগর , এক্ষণে বিধবার জমি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার খবরে তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। ভাবলেন, এই ছেলেকে আর আমার পুত্রের পরিচয় দেওয়া উচিত নয়।ও কুপুত্র শুধু নয়, কুলাঙ্গারও। ওকে ত্যাজ্যপুত্র করা ছাড়া নিজের মান-সম্মান রক্ষার আর কোনো উপায় নেই। স্ত্রী দীনময়ীকে বললেন, নারায়ণের মতো একটি দুর্বৃত্তকে আমি আর ছেলের পরিচয় দিতে পারব না। ওকে ত্যাজ্যপুত্র করলাম।

হ্যাঁ, এইরকমই ছিলেন বিদ্যাসাগর। তিনি যন্ত্রণায় অধীর হয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন, পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছে, বন্ধুরা দূরে সরে গেছেন, তবুও নিজের সিদ্ধান্তে অবিচলিত থেকেছেন।
সেই আপসহীন যন্ত্রণাদগ্ধ ঈশ্বরের নিঃসঙ্গতা ও অন্তরাত্মার কান্নার শব্দ এই উপন্যাস।

মূল্য- ৫৯৫ টাকা

---------------------------------------------------------------
বই ঢাকার মধ্যে ক্যাশ অন ডেলিভারি(COD) নিতে এবং বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সুন্দরবন কুরিয়ারে বই সংগ্রহ করতে আগ্রহী হলে ---ওয়েবসাইট কিংবা ইনবক্সে অর্ডার করুন। 
---------------------------------------------------------------
🚀 দ্রুত ডেলিভারি পেতে ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করুন। 
🛡 অরজিনাল প্রিন্ট
🚛 ক্যাশ অন ডেলিভারি ( ঢাকাতে)
💠 অর্ডার করতে ইনবক্স অথবা ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ।
📃 ওয়েবসাইট থেকে ৪৯৯ টাকার বই অর্ডার করলে পাচ্ছেন ফ্রি ডেলিভারি !!! (ঢাকাতে)


প্রাপ্তিস্থান:- কলেজ স্ট্রিটে অভিযান বুক স্টোর। ঠিকানা- ১০/২এ রমানাথ মজুমদার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০ ০০৯, মোবাইল- ৮০১৭০৯০৬৫৫
অনলাইন প্রাপ্তিস্থান- www.abhijanbooks.com, www.dokandar.in
এছাড়াও বাড়িতে বসে বই পেতে অভিযানের অফিশিয়াল নম্বর (৮০১৭০৯০৬৫৫)-এ সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

Comments

Popular posts from this blog

[PDF] সীরাহ মুহাম্মদ প্রথম খন্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড রেইনড্রপস পিডিএফ - Sirah Muhammad (sa:) First & Last Raindrops

গাযওয়াতুল হিন্দ বই pdf - প্রফেসর ড. ইসমাতুল্লাহ | Gazwatul Hind by Professor Dr. Ismatullah

সিক্রেটস অব জায়োনিজম Full PDF : লেখক হেনরি ফোর্ড | Secrets of Jainism Bangla Anubad PDF