সম্পদ গড়ার কৌশল (একজন মুসলিম উদ্যোক্তা হালাল পন্থায় যেভাবে সম্পদ গড়বেন) (short pdf)

সম্পদ গড়ার কৌশল (একজন মুসলিম উদ্যোক্তা হালাল পন্থায় যেভাবে সম্পদ গড়বেন) #১ বেস্টসেলার ব্যবসা, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি লেখক : উমার সুল প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন বিষয় : ব্যবসা, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি

সম্পদ গড়ার কৌশল (একজন মুসলিম উদ্যোক্তা হালাল পন্থায় যেভাবে সম্পদ গড়বেন)
#১ বেস্টসেলার ব্যবসা, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি
লেখক : উমার সুল
প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
বিষয় : ব্যবসা, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি
পৃষ্ঠা : 220, কভার : পেপার ব্যাক

শুরুর কথা........
আপনি কি ধনী মুসলিম হতে চান? সফল মুসলিমদের নাম ও কর্মগাঁথা জানতে ইচ্ছুক? তাহলে ঠিক জায়গাতেই এসেছেন।

আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী কয়েকজন মুসলিম উদ্যোক্তার সাথে। নিজেদের সাফল্যের রহস্য আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করবেন তারা।

ব্যবসার জগত প্রচণ্ড প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও কঠিন। এই ময়দানের সাফল্য সম্পর্কে অনেক লেখক প্রচুর কাজ করেছেন। সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী সংক্রান্ত বইও প্রচুর।

কিন্তু এসব তথ্য মুসলিম পাঠকের পূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে অপারগ। কারণ সাফল্যের বিরাট অংশ নির্ভর করে মানুষের বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের ওপর। মুসলিম উদ্যোক্তাদের নিয়ে আলোচনা করা বই এটিই প্রথম।

আজকের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে সাফল্য বাগিয়ে নিতে তারা কী এমন করছেন?

এরকম চল্লিশ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তারই ফলাফল এই বই। আয়, প্রভাবশালীতা ও নিজস্বতার বিচারে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন এসকল মুসলিম উদ্যোক্তা। একেকজন আবার পৃথিবীর একেক প্রান্তের মানুষ। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে আফ্রিকা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা—কিছুই বাদ নেই। এমনই মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে গ্রন্থটি সাজানো হয়েছে।

শুরু হতে চলেছে যাত্রা। লেখকের জানামতে, এ ধরনের বই গত কয়েক শতাব্দির মাঝে এটিই প্রথম।

তাই যদি ভেবে থাকেন—
  1. মুসলিম হয়েও কীভাবে প্রচুর টাকা কামানো যায়?
  2. কীভাবে অন্যদের টেক্কা দেওয়া যায় এ প্রতিযোগিতায়?
  3. টাকা দিয়ে করবটা কী?
  4. পথে কী কী চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে?
  5. আজকের বাজারে সফল হতে হলে কী কী দক্ষতা প্রয়োজন?
তাহলে জেনে রাখুন, ঠিক এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই পাবেন মুসলিম উদ্যোক্তা বইটিতে। সাথে পাবেন আরও অনেক কিছু!

ওপারে দেখা হবে, ইনশাআল্লাহ।

সম্পদ দিয়ে সওয়ার কামান

ধনাঢ্যতা ইসলামের দাবি...

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ওপর ভরসা কর েমুসলমি উদ্যতো তার সরোটা চষ্টো কর।ে মানুষ হসিবে েআমরা আমাদরে রযিকরে জন্য আল্লাহর প্রতা নভিরশীল। খাবার, পােশাক ও আশ্রয়রে জন্য আমরা বৃষ্ট িও যমীনরে উপর নভিরশীল। সইে আদম আলাইহ িসালাম থকে েনয়ি েপ্রতটি িমানুষরে ক্ষত্রেই একথা প্রযােজ্য। তাই রযিক খুঁজ েনতিহেব,ে তব েসাহায্য চাইতহেব েস্রষ্টার কাছ।ে

কয়েকজন নবি বিরাট ধনী ছিলেন। আল্লাহর কাছ থেকেই এসব চেয়েছেন তাঁরা। কারণ আল্লাহই আমাদের রিযিকদাতা। এ ব্যাপারে সবার আগে সামনে আসে সুলাইমান আলাইহি সালামের ঘটনা।

বাদশাহ দাউদ আলাইহি সালামের ছেলে সুলাইমান। সেইসাথে আবার আল্লাহর রাসূলও। আল্লাহ ইতোমধ্যে যে সম্পদ দিয়েছেন, তা তো আছেই। এরপরও তিনি দুআ করেছেন এমন কিছুর জন্য, যা গোটা সৃষ্টিজগতে কেউ কখনও পায়ওনি, পাবেও না। তাই তাঁর রাজ্যসীমা শুধু ভূমিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সাগর, বাতাস, এমনকি জিনদের অদৃশ্য জগতের ওপরও ছিল তাঁর কর্তৃত্ব।

নবি-রাসূলগণ হলেন আদর্শ মানুষ, সকল বিষয়ে অনুকরণীয়। কুরআনে তাঁদের কথা আনাই হয়েছে, যেন আমরা সেখান থেকে উপকৃত হই ও তা বাস্তবায়ন করি।

কোন সত্তার কাছে দুআ করছেন, মাথায় রাখুন। সবকিছু তাঁর অধিকারে। চাইবেনই যখন, বেশি করে চান!

আল্লাহর ভাণ্ডার অসীম। তিনি আপনাকে অসীম পরিমাণ দিতেও সক্ষম। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে কখনও কিছু চাওয়ার সুযোগ হলে কী চাইবেন? একটি ল্যাপটপ বা হাজার কয়েক টাকার জন্য কি তাকে বিরক্ত করবেন আপনি? নাকি গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রকল্প অনুমোদিত করিয়ে নেবেন?

এবার ভাবুন। রাষ্ট্রপ স্রষ্টা মালিক আল্লাহর কথা। রাষ্ট্রপতি যা কিছুর মালিক, তারও মালিক আল্লাহ। তাই প্রিয় পাঠক! আরও চান, আর দেখুন কী হয়।

পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক..

মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও উদ্যোক্তা ছিলেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন দেখা যায়। তাঁর সুন্নাহ অনুসরণে আগ্রহী যেকোনো মুসলিমের মাঝেও এর প্রভাব স্পষ্ট।

ইসলামের বিকাশ ঘটেছে প্রাচীন আরবের সবচেয়ে গমগমে বাণিজ্যিক শহরে। এটি ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। ইসলামের প্রসারও হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের হাত ধরে। ব্যবসা কীভাবে মুসলিমদের পরিচিতি ছড়িয়েছে, তার একটি অনুপম দৃষ্টান্ত হলো তিন মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত সিল্ক রোড।

সিল্ক রোডে ধরে ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা আছে, এরকম কিছু মুসলিম উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকারও নিয়েছি আমি। আফ্রিকায় বসতি স্থাপন করেছে তাদের পরিবার। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে—যেখানেই যান না কেন, সুযোগ সবখানেই বিদ্যমান। তাদের কেউ কেউ আজ কোটিপতি।

আপনিও গড়ে তুলতে পারেন এই মানসিকতা। আর এটা আপনার জন্য বিরাট একটি সুবিধাও। দুনিয়ার সাফল্য আর আখিরাতের সাফল্যের মাঝে কোনো ঠোকাঠুকি নেই। উভয়টিই অর্জন করা সম্ভব। আর এ বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অসাধারণ সাহাবিদের কাছে কৃতজ্ঞ। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবিদের অধিকাংশই সম্পদশালী অবস্থায় মারা গেছেন।

সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মারা যাওয়ার পর তাঁর সম্পদ হিসেব করতে ও উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টন করতেই লেগে যায় তিন বছর। সাহাবিদের জীবনের এই দিকটি নিয়ে কেন যেন খুব একটা আলোচনা হয় না।

উসমান বিন আফফান রা.-এর উদাহরণও উল্লেখযোগ্য। এক পর্যায়ে মুসলিম ভূমিতে সংঘটিত মোট ব্যবসার অর্ধেকের মালিক ছিলেন তিনি একাই! আজকের যুগে কোটিপতি আলেম বা ইমামের কথা ভাবা যায়! যায়। এই বইতেই সামনের দিকে এমন কয়েকজনের দেখা পাবেন।

সততার ফল..

কুরআনে ব্যবসার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এরকম একটি ঘটনা আছে শুআইব আলাইহি সালামের। তিনি তাঁর জাতিকে বলেছেন,

“মাপে পূর্ণ করে দাও। মানুষকে ঠকিয়ো না...যদি মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে এটিই তোমাদের জন্য উত্তম।” [সূরা আল-আরাফ, ৭:৮৫]

নবিগণ ছিলেন সৎ ও নীতিবান। আমাদের নবিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সবাই চিনত বিশ্বস্ত বা আল-আমিন নামে। সততার গুণেই উন্নতি করেছেন তিনি।

ড. মাইলস ড্যাভিস একজন আফ্রিকান আমেরিকান মুসলিম। তিনি শেনোদোয়াহ বিজনেস স্কুলের ডিন। ড. ড্যাভিস বলেন,

“উন্নত মানের পণ্য ও সেবা সকলেই চায়। অপর পক্ষ যদি জানতে পারে, মান ও সততার ব্যাপারে আপনার সুনাম আছে, তাহলে তার কাছে আপনি সোনার চেয়েও দামি।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সততার একটি অনুপম দৃষ্টান্ত দেখা যাক। যে লোকগুলো তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করত, এমনকি তারাও তাঁর কাছে আমানত রাখত দামি দামি জিনিস। এমনকি হত্যা ষড়যন্ত্র করার সময়ও সেসব আমানত আগে ফেরত চায়নি তারা। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সততার প্রতি তাদের এই পরিমাণ আস্থা ছিল। তিনি ছিলেন আস্থাভাজন, ন্যায়পরায়ণ ও কথা-কাজে মিল রাখা একজন মানুষ।

ঠিক এই আস্থার কারণেই কিছু ব্যবসায়ী উন্নতি লাভ করেন। পুঁজিবাজার টিকেই আছে মানুষে-মানুষে বিশ্বাসের কারণে। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও একই কথা। ধরুন, আমি অনলাইনে একটি ল্যাপটপ কিনব। যে ওয়েবসাইটে লগইন করছি, তাদের প্রতি আমার আস্থা থাকাই লাগবে। ক্রয় করার বোতামটি চাপা মাত্রই টাকা কেটে নেওয়া হলো আমার অ্যাকাউন্ট থেকে। পণ্য কিন্তু এখনও আমার হাতে আসেনি, কিন্তু টাকা ঠিকই চলে গেছে। এ পরিস্থিতেও আমি নিশ্চিন্ত থাকব, যদি ঐ ওয়েবসাইটের সততার প্রতি বিশ্বাস থাকে আমার। আস্থা না থাকলে সব কাজই ধীর হয়ে যায়। বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে আমি সশরীরে তাদের দোকানে যেতাম, মালিকের নাম, এমনকি ঠিকানা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতাম হয়তোবা। তাহলে বুঝতেই পারছেন। আস্থার অভাব মানে শম্বুক গতির বাণিজ্য।

তাই উন্নতি করতে চাইলে আগে আস্থার ভিত গড়ে নিন।

আস্থা তৈরি করতে সারাটা জীবন লেগে যায়। কিন্তু ভেঙে যেতে প্রয়োজন একটি মাত্র মুহূর্ত।

বিশ্বস্ততা শুধু ব্যবসার না, চরিত্রেরও অংশ।

যত যা-ই হোক, নিজের কাছ থেকে তো আর লুকানো সম্ভব না। মানুষের কাছ থেকে যতই আড়াল হই না কেন। উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হয়ে যাওয়ার পর আমরা ইহসান নিয়ে আলোচনা করব। নিজের প্রতি সততা এবং নিজের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করা পরিহার করা।

শ্ৰেষ্ঠ দৃষ্টান্ত...

নবিজির চরিত্র অদ্বিতীয় ও অনন্য। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.-কে অনেক অমুসলিমও মানব-ইতিহাসের সফলতম ব্যক্তি বলে মানেন। অনাথ অবস্থায় দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে কেটেছে তাঁর শৈশব। অথচ নববি মিশন শুরু করার পর সেই তিনিই হয়ে ওঠেন উন্নত ও শান্তিপূর্ণ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এক রাষ্ট্রের নেতা। আর ঐ রাষ্ট্রটিই পরে একসময় পরিণত হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এক সাম্রাজ্যে। শুরুর দিকের রাষ্ট্রগুলো দুর্বল ও বিলুপ্ত হয়ে যাবার বহুকাল পরও আরও অনেক রাষ্ট্রের আবির্ভাব হয়েছে, যেগুলো ইসলামি মূলনীতি দিয়ে প্রভাবিত।

আপত্তি আসতে পারে, অন্যান্য ধর্মেও তো অনেক ভালো ভালো শিক্ষা রয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্ম, ইয়াহুদি ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি। কিন্তু এমন আরেকজন ধর্মনেতা দেখান তো, যিনি আজকের যুগে প্রয়োগ করার মতো নিখুঁত বিনিয়োগ নীতিমালা দিয়ে গেছেন। আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর এমন কাউকে পাইনি। এমনকি বাড়ি বিক্রি করে পাওয়া টাকা দিয়ে কী করতে হবে, তাও শিখিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি। আর মুসলিম উদ্যোক্তার জন্য এসব শিক্ষা এক বিরাট প্রাপ্তি।

তাই এই একবিংশ শতাব্দিতেও নামিদামি অনেক মুসলিম ব্যবসায়ী নবিজির নীতি ও দর্শন অনুসরণ করে সফল হচ্ছেন।

সমাজকল্যাণ...

মুসলিম উদ্যোক্তার একটি প্রধান লক্ষ্য হবে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা। ন্যায়ের হাত ধরেই আসে শান্তি ও উন্নতি। এ কথা সর্বজনবিদিত।

আমার দেখা উদ্যোক্তাদের যিনি যত সফল, তিনি তত দানশীল। যে সমাজ ও জনপদে তারা বাস করেন, সত্যিকার অর্থেই তাদের সাহায্য ও সেবা করে চলেন তারা।

বিশ্বখ্যাত উদ্যোক্তা আযিম রিযভীর সাথে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কানাডার ওন্টারিও-তে বাস করেন তিনি। সেখানকার সমাজের প্রতি তার অবদান ব্যাপক। পুরো দেশের মাঝে তার শহরটি এখন সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান। একদম শূন্য থেকে শুরু করে দুই কি তিন বছরের মাঝে তিনি দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন সেখানকার এক নম্বর ব্রোকারেজ ফার্ম। আরও কয়েকজন সফল মুসলিম উদ্যোক্তা ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় তিনি আরেকটি প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রকল্পটির ফলে সেখানকার স্থানীয় হাসপাতালটির সম্প্রসারণ হবে। রিযভী ও তার মুসলিম সঙ্গীরা এর নাম দিয়েছেন “দ্য মুসলিম লেগ্যাসি উইং”।

দানশীলতার হাত ধরে উন্নতি চলে আসে, কী আশ্চর্য! এখন পালটা বলতে পারেন যে, কিছু মুসলিম তো অবৈধ আত্মসাৎ ও অসততার মাধ্যমেও উন্নতি করে ফেলছে। এটা খোঁড়া যুক্তি। নিজেকেই প্রশ্ন করুন, “মুসলিম উদ্যোক্তাগণ জনগণকে কী পরিমাণ সেবা দেন? তাদের উসিলায় কত মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে?” তাহলেই বুঝবেন,
এই উদ্যোক্তারা সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার মূলনীতি অনুসরণ করছেন। এই ইসলামী মূল্যবোধটির প্রয়োগের কারণেই তারা পাচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য। অসততার মাধ্যমে এরকম সামষ্টিক উন্নতি আসে না।

ইসলামের অনুশাসন এখানেই শেষ নয়। পূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম সুদকেও হারাম করেছে। সামাজিক ন্যায়বিচারের এই ব্যাপারটি নিয়ে সামনের অধ্যায়গুলোতে আরও আলোচনা হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে এ বিষয়টি আপনার ক্ষেত্রে কীভাবে প্রযোজ্য, তাও দেখব আমরা।

সম্পদের ইতিবাচক ব্যবহার

সর্বাত্মক প্রচেষ্টা...
মূসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালাম যে বার্তা নিয়ে এসেছিলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন ঠিক তা নিয়েই। কিন্তু মহানবিকে পাঠানো হয়েছে সমগ্র মানবজাতির প্রতি। এই ব্যাপারটি বিশেষ মনোযোগের দাবিদার। কারণ এর মাধ্যমে মুসলিমরা জাতি-বর্ণ-দেশের সীমানা অতিক্রম করে এসেছে। এই বার্তা সব মানুষের জন্য। এমনকি ইসলামের রহমত থেকে উপকৃত হয় অমুসলিমরাও।

আর ঠিক এ কারণেই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য বৈশ্বিক রূপ লাভ করেছে মুসলিমদের হাত ধরে। চীন থেকে নিয়ে স্পেন হয়ে পশ্চিম আফ্রিকা পর্যন্ত ব্যবসা করতে পারত যে কেউ। একেই বলে বিশ্বায়ন!

তাই ইসলাম সকলের জন্য বাণিজ্য উৎসাহিত করে। প্রত্যেকের সম্পদ ও সম্পত্তিকে নিরাপত্তা দেয় শারিআহ। এ সবকিছুই উন্নয়ন তরান্বিত করার জন্য।

এমনকি হাজ্জের সময়ও মক্কায় বেচা-কেনা করে ব্যবসায়ীরা। আজ পর্যন্ত এমনটিই হয়ে আসছে। আপনি হয়তো হাজরে আসওয়াদের দিকে যাচ্ছেন, এমনসময় কেউ একজন এসে সুন্দর একটি ঘড়ি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছে কিনবেন কি না! আর এ কাজ একশত ভাগ বৈধ। ইসলাম আপনাকে এই পরিমাণ স্বাধীনতা ও সুযোগ দেয় মুনাফা অর্জনের।

বিশেষ সম্পর্ক

মুসলিম উদ্যোক্তার প্রথম পরিচয় সে আল্লাহর দাস। আধ্যাত্মিক মর্যাদার সর্বোচ্চ স্তর এই দাসত্ব। এমনকি রাসূলণের ক্ষেত্রেও। কেন?

উদ্যোক্তা হিসেবে আল্লাহর বান্দা হওয়া মানে প্রাকৃতিক নিয়মের অনুসরণ। আল্লাহ এ জগতে যে নিয়ম সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তা-ই প্রাকৃতিক নিয়ম। অর্থাৎ, আল্লাহ দেন, আমরা নিই। পাখি যেভাবে রিযকের জন্য আল্লাহর প্রতি ভরসা করে, আপনিও তা-ই করবেন।

পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় জেগে ওঠে। আর সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে ভরাপেটে। অথচ কী দুর্ভাগ্য! আমরা অনেকেই মনে করি, খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের জন্য আমরা সরকার বা অন্য কোনো মাখলুকের ওপর নির্ভরশীল। অথচ এটি কোন প্রাকৃতিক নিয়ম নয়। এই ভুল ধারণা আমাদের মাঝে তৈরি করে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা।

নগণ্য পরিমাণ সম্পদের অধিকারী কিছু মানুষ কী শান্তিতে জীবন কাটায়! এই ব্যাপারটি সবসময় বিস্মিত করে এসেছে আমাকে। এর চেয়েও বেশি বিস্মিত হয়েছি কী দেখে, জানেন? বিরাট বড় ধনকুবের, কিন্তু সে সম্পদ হারিয়ে ফেলার পরও একটুও চিন্তিত নন। যেমন- REDCO এর সিইও জনাব মুজীবুর রহমান। মিথ্যে অভিযোগে একবার জেল খাটতে হয়েছিল তাকে। সেসময় তিনি হারিয়ে বসেন কোটি ডলারের নির্মাণকাজের ব্যবসা। কিন্তু তিনি তা নিয়ে উদ্ভ্রান্ত হয়ে যাননি। এজন্যই শূন্য থেকে শুরু করে আবারও গড়ে তুলতে পেরেছেন হারানো সম্পদ।

ড. ইয়াকুব মির্জাকে এরকমই আরেকজন মহান উদ্যোক্তা বলে মনে করি আমি। তিনি আমানাহ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন নর্থ আমেরিকার পরিচালক। প্রথম যেদিন তার সাথে দেখা করি, সেদিন তার প্রশান্ত চেহারা আর কণ্ঠ আমাকে অবাক করে দেয়। তিন বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তার ঘাড়ে। এই দায়িত্বের বোঝা বয়েও এরকম প্রশান্তি ধরে রেখেছেন তিনি।

সম্পদ গড়ার কৌশল (একজন মুসলিম উদ্যোক্তা হালাল পন্থায় যেভাবে সম্পদ গড়বেন) অরিজিনাল কপি ক্রয় করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ