শরীরে তাহার এঁটেল মাটির ঘ্রাণ ছিলো - নমিতা সরকার । sorire tar atel matir grhan chilo

বইঃ শরীরে তাহার এঁটেল মাটির ঘ্রাণ ছিলো
লেখকঃ নমিতা সরকার
ধরনঃ কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশকঃ রাশেদ রানা,
চলন্তিকা প্রকাশনী।
প্রথম প্রকাশঃ বইমেলা ২০২২
মলাট মূল্যঃ ১৬০ টাক


আমরা যারা আবৃত্তিশিল্পী, তাদের দূর্বলতার একটি বড় জায়গা হচ্ছে কবিতা! আর ব্যক্তিগতভাবে আমি সবার লেখা পাঠ কিংবা আবৃত্তি করতে পারিনা। তার কারন হচ্ছে লাইনগুলোতে যথাযথ অর্থ এবং তাল খুঁজে না পাওয়া। কিন্তু এক কাব্যগ্রন্থটি পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে আবৃত্তি করার জন্য এটি একটি চমৎকার বই। তবে ৪/৫টা কবিতা একটু বেশিই ভালো লেগেছে।
 
তার মধ্যে "মহাকাল", " মনে পড়ে", "ডুব সাঁতার"," ভালোবাসার মন্ত্র", "ব্যবচ্ছেদ" অন্যতম। বইয়ের মূল্যের কথা দিয়ে যদি বিবেচনা করি, এত স্বল্পমূল্যে এতগুলো সুন্দর কবিতা পাওয়া বিশাল ব্যাপার।
গঠনমূলক সমালোচনাঃ একটা বই খুবই কমই পুরোপুরি ভালো হয় পাঠক হিসেবে এই বিশ্বাস আর সত্যকে মেনে নিয়েই বই পড়ি। 

এই বইটাতে টাইপিং মিস্টেকের জন্য দুটো শব্দে ভুল বানান পেয়েছি। সেটা অবশ্য লেখকের দায় নয়। কিন্তু ৩/৪টা কবিতা ছিল, যেগুলো খুবই সাদামাটা লেগেছে। ভাবের গভীরতা এবং কাহিনী বর্ননায় ঘাটতি আছে মনে হয়েছে। তবুও সর্বোপরি নমিতা সরকারের এই কাব্যগ্রন্থটিকে আমি ভালো লাগার সারিতেই রাখবো।
"ওই যে দূরে বিলীন হয়ে গেছে মহাকাল,
সৃষ্টির আদি থেকে, স্টিফেন হকিংয়ের সেই যে মহাবিস্ফোরণ থেকে,
সেই কালের সাক্ষী কি সৌরজগতের ওই বিশাল সূর্য?
নাকি এই মর্ত্যের সুউচ্চ এভারেস্ট? " 
ব্যস্ততার কারণে অনেকদিন কোন বই পড়া হয় না। হঠাৎ একটু অবসরে এক কাপ চায়ে চুমুকে দিতে দিতে হাতে তুলে নিলাম একটা কবিতার বই। বইটার শুরুতেই লেখক পরিচিতি পড়ে দেখলাম লেখিকার বাড়ি গাজীপুর। এটা দেখেই আমার ভীষণ ভালো লাগছিলো। কারণ আমিও গাজীপুরের মেয়ে। নিজ জেলার একজন একজন গুণী মানুষের বই পড়ার আগ্রহটা বেশ বোধ করলাম।
 
কবিতার বইটার কবিতাগুলোতে চোখ বুলাতে বুলাতে দেখলাম, লেখার হাত বেশ চমৎকার, কবিতায় গভীর চিন্তাচেতনার ছাপ বিদ্যমান। একটার পর একটা কবিতা পড়ছিলাম। মোট ৮০ টি কবিতা নিয়ে বইটি রচিত। সব কবিতাগুলোই ভালো কিন্তু সেখান থেকে কিছু কিছু কবিতা আমার বেশি ভালো লেগেছে। যেমন- ঘড়ি, মানবী, অসূর্যস্পর্শ্যা, হাজার বছর ধরে, ডুব সাতার, মহাকাল, একদিন, মনে পড়ে, অনুভূতি, ব্যবচ্ছেদ, অন্তঃপুরবাসিনী, শামুক জীবন, মেয়ে তুমি, দেহতত্ত্ব, ভালোবাসার মন্ত্র, আগমণী বসন্ত। এ কবিতাগুলো আমার বেশি ভালো লেগেছে।
 
আমাদের এই পাঁচমিশেলী জীবনে সবকিছুই সুক্ষ্ম অনুভূতির ব্যাপার। আবার এই অনুভূতিগুলোর গায়ে রঙ চড়াবার দায়িত্বও আমাদের নিজেদের উপরেই বর্তায়। যে যে রঙে পৃথিবীকে দেখে। প্রকৃতি এখানে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতির নির্যাসের সাথে আমাদের ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য অনুভূতিগুলোর সংমিশ্রণেই বইয়ের কবিতাগুলোর আত্মপ্রকাশ।
 "কখনো নীল হৃদয়ের বিষাদগুলোকে আকাশের পানে ছুঁড়ে মারে", " হৃদয়ের হলুদ বৈশাখ সামনে সাজিয়ে রাখে শৈশবের আম কাঁঠালের ডালি"

প্রকৃতির তুলির আঁচড়ে মাটির ঘ্রাণ মিশিয়ে অনুভূতিগুলোর গায়ে রঙ মাখানো হয়েছে এ বইটির কবিতাগুলোতে।
 
সবশেষে আমি বলব লেখিকার বইয়ের নামকরণ যথার্থ কবিতাগুলোর গায়েও আমাদের চেনা পরিচিত ঘ্রাণ পাওয়া যায়, কখনো গ্রামীণ জীবন আবার কখনো মানব জীবন সম্পর্ক। তবে যেটা বলব, লেখিকার কিছু কিছু কবিতার শব্দচয়ন অপেক্ষাকৃত দূর্বল মনে হয়েছে। আশা করি পরবর্তীতে লেখিকা এ ব্যাপারে আরো সচেতন হবেন। সবমিলিয়ে কবিতার এ বইটি আমার ভালো লেগেছে। যারা কবিতা পড়তে পছন্দ করেন তারা বইটি সংগ্রহ করতপ পারেন।

শরীরে তাহার এঁটেল মাটির ঘ্রাণ ছিলো বইটি সংগ্রহ করুন 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ