“পণ্ডিত নই, তাই চট করে বিশ্বাস করতে প্রবৃত্তি হয় না। ইউরোপীয় বেদেরা ফর্সায় প্রায় ইংরেজের সামিল, সিংহলের বেদে ঘনশ্যাম। আচার-ব্যবহারেও বিস্তর পার্থক্য, বৃহৎ ফারাক। আরবিস্থানের বেদেরা কথায় কথায় ছোরা বের করে, জর্মনীর বেদেরা ঘুষি ওঁচায় বটে, কিন্তু শেষটায় বখেড়ার ফৈসালা হয় বিয়ারের বোতল টেনে। চীন দেশের বেদেরা নাকি রূপালি ঝরণাতলায় সোনালি চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চুকুস চুকুস করে সবুজ চা চাখে”
কিন্তু নিজের জীবনের একটি ঘটনার শেষে তিনি বিশ্বাস না করে পারলেন না। তখন তিনি জার্মানীর রাজধানীতে। বয়স ২৫/২৬। একদিন কলেজের পাশের কাফেতে বসে কফি খাচ্ছিলেন। তখন এক বেদেনী তাকে ‘যবনিকা’ ভাষায় কি জানি বলতে লাগল।
তাঁর ভাষায় “সে ভাষা আমার চেনা-অচেনা কোন ভাষারই চৌহদ্দি মাড়ায় না, কিন্তু শোনালো – তারই মুখের মত-মিষ্টি।”
পরে কাফে মালিক মুজতবা আলীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে যখন বললেন যে তিনি ভারতীয়, তখন মেয়েটা হুঙ্কার দিয়ে কাফেওয়ালাকে বলল, “সেই কথাইতো হচ্ছে। আমরা বেদে, ভারতবর্ষ আমাদের আদিম ভূমি। এও ভারতীয়। আমার জাতভাই। ভদ্রলোক সেজেছে, তাই আমার সঙ্গে কথা কইতে চায় না।”
পরে মুজতবা আলীর সাথে আলাপচারিতায় জানা গেল, এরা বেদে, কিন্তু পড়াশোনা করে না। তারা ভাবতেও পারে না, কোন বেদে কখনও পড়াশোনার চৌহদ্দি মাড়িয়েছে।
” বুঝতে পেরেছি বাপু, বুঝতে পেরেছি; বাপ তোমার দু’পয়সা রেখে গিয়েছে- হঠাৎ নবাব হয়েছ। এখন আর বেদে পরিচয় দিতে চাও না! হাতে আবার খাতাপত্র- কলেজ যাও বুঝি? ভদ্রলোক সাজার শখ চেপেছে, না?”
আমি বললুম, ‘ফ্রালাইন, তুমি ভুল বুঝেছ। আমার সাতপুরুষ লেখাপড়া করেছে। আমিও তাই করছি। ভদ্রলোক সাজা না সাজার কোনো কথাই উঠছে না।’
মেয়েটি এমনভাবে তাকালো যার সোজা অর্থ ‘গাঁজা গুল’।
জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি ভারতীয় নও?
‘আমি বললুম, ‘আলবৎ’!
আনন্দের হাসি হেসে বলল, ‘ভারতীয়েরা সব বেদে।’
আমি বললুম, ‘সুন্দরী, তোমরা ভারতবর্ষ ছেড়েছ, দু-হাজার বছর কিংবা তারও পূর্বে। বাদবাকী ভারতীয়রা এখন গেরস্থালী করে।’
কৃতজ্ঞতা - Zahidur Rahim
প্রতীকী ছবি - এক বেদে মহিলা এবং উনার সাজানো-গোছানো পরিপাটি নৌকা। লোকেশন : দিরাই, সুনামগঞ্জ
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....