আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণের দান - sean

ম্যারিলিন, বয়স ৩৩, বস্টনকেন্দ্রিক একটি অ্যাড ফার্মে একজন নির্বাহী কর্মকর্তা। সময়ের পরিবর্তনের সাথে চাকরিজীবীদের দৈনিক কাজের চাপ কতটা বেড়েছে, সেটাই তার গল্প।

আমি ছোটো থাকতে আমার বাবা আমার মতোই একটি অ্যাড ফার্মের নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন; যদিও তার কোম্পানিটা আমারটার তুলনায় অনেক ছোটো ছিল। সেই ভিন্নতার কথা বাদ দিয়ে বাকি সব দিক থেকে বাবার তখনকার চাকরি এবং আমার বর্তমানের চাকরি ঠিক একই রকম।
বাবা টাইপ করতে পারতেন না এবং কাজ সম্পর্কিত ফোনকলগুলো নিজে করতে পছন্দ করতেন না। এসব তিনি সেক্রেটারিকে দিয়ে করাতেন। ঠিক পাঁচটা বাজে সেক্রেটারি বাড়ি যেত এবং তার পর থেকে বাবা হয়ে যেতেন পুরোপুরি অকেজো! পরেরদিন সকালে সেক্রেটারি ফেরত আসার আগ পর্যন্ত বাবা কাজের ধারেকাছে ভিড়তেন না। আমার বয়স যখন ১০, তখন মনে আছে বাবা এ নিয়ে মায়ের সাথে কৌতুক করতেন; বলতেন—তার এই কারণেই ঠিক ছয়টায় টেবিলের ওপর ডিনার চাই।
তার কর্মদিবসের সাথে আমার কর্মদিবসের আকাশ-পাতাল পার্থক্যের কথা আমি প্রায় ভাবি। আমি যে শুধু অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করি, তা-ই নয়; সেটা তো আজাকাল বাধ্যতামূলক। তার ওপর প্রযুক্তির অগ্রগতির কৃপায় আমার জীবনের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় অফিসের কাজ প্রবেশাধিকার পেয়ে গেছে। অফিস এবং বাড়ি—দুই জায়গাতেই আমার আলাদা কম্পিউটার এবং ফ্যাক্স মেশিন আছে, ভয়েস মেইল আছে অফিসের ফোনে, মোবাইলে এবং বাড়ির ফোনে। ইমেইল অ্যাক্সেস আছে অফিসে ও বাড়িতে। তার ওপর সম্প্রতি আমার বস আমাকে একটা ব্ল্যাকবেরি ফোন ধরিয়ে দিয়েছে; যাতে আমি যেখানেই থাকি না কেন, ঘণ্টায় অন্তত একবার ইমেইল দেখতে পারি!
জরিপে গড়ে সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করি—এই প্রশ্নের জবাবে লিখেছিলাম ৫৬। অফিসের দৈনিক ১০ ঘণ্টা এবং বাড়ি ফিরে এক ঘণ্টা ইমেইল চেক করা মিলিয়ে এরকমই একটা অঙ্ক দাঁড়ায়। কিন্তু এটা দিয়ে আসলে সত্যিকারের কাজের চাপটাকে মাপা যায় না। আমার থেকে আশা করা হয় যে, আমি সারাক্ষণ ফোন বা ইমেইলের উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকি এবং এই কারণে অনেকটা সময় দুশ্চিন্তায় কাটে। বাবা যেভাবে দিন শেষে কাজের বিষয়বস্তুকে মাথা থেকে সম্পূর্ণ নামিয়ে রাখতেন, তেমনটা আমি মনে হয় কখনোই পারি না।’
আমাদের জরিপে পেয়েছি যে, ম্যারিলিন যে পরিমাণ কাজ করে—সাপ্তাহিক ৫০ ঘণ্টার ওপরে—সে পরিমাণ কাজ উচ্চ-উপার্জনকারী নারীদের ২৯%-এর করতে হয়। যে যত বেশি সফল, তার কর্মসপ্তাহ ততটাই লম্বা। একই পরিমাণ কাজ করে অতি উচ্চ-উপার্জনকারী নারীদের ৩৪%। বিশেষ করে চিকিৎসা, আইন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রগুলোতে সময়ের চাহিদা অত্যন্ত বেশি।
আরও দেখা যায় যে, সব পেশার উচ্চ-উপার্জনকারী নারীরাই পাঁচ বছর আগেও এর থেকে অনেক কম কাজ করত। তাদের তিন ভাগের এক ভাগ পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখন বেশি সময় ধরে কাজ করে, তার মধ্যে আবার এক চতুর্থাংশের সাপ্তাহিক কাজের সময় বেড়েছে ২০ ঘণ্টা করে। অতিউচ্চ-উপার্জনকারী নারীদেরও তিন ভাগের এক ভাগের পাঁচ বছর আগের তুলনায় কর্মসময় বেড়েছে এবং তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ বর্তমানে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা করে অতিরিক্ত কাজ করে। অতিউচ্চ-উপার্জনকারী নারীদের এক চতুর্থাংশ আবার বিজনেস ট্রিপের জন্য প্রতি তিন মাসে অন্তত পাঁচ রাত করে বাড়ির বাইরে কাটায়।
জরিপে অংশগ্রহণকারী অনেক নারী, এবং অনেক পুরুষও, একই ব্যাপারে অসন্তুষ্ট—তাদের কাজের চাপ অনেক বেশি।
জন, বয়স ৩৭, ম্যাসেচুসেট্সের একটি গ্রাফিক ডিজাইন কোম্পানিতে চাকরি করে। তার মতে—এই দীর্ঘ কর্মদিবসের উদ্ভব যতটা অকার্যকর, ততটাই অন্যায্য সাব্যস্ত হয়েছে। আমি দেখতে চাই যে, রাতে এবং ছুটির দিনে কর্মচারীদের থেকে কাজ আশা করাটা যেন আবারও অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার হয়ে যায়। কর্মঠ হওয়ার মানে এই না যে, সবাইকেই বেশি সময় কাজ করতে হবে। চাইলেই কাজের দক্ষতা বাড়িয়ে, প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে, নিজের ডিপার্টমেন্টে টিমওয়ার্কের সদ্ব্যবহার করে অনায়াসে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে অফিস থেকে বের হওয়া যায়; কিন্তু আজকের কর্মস্থলের পরিবেশে এটা একটা নিন্দনীয় ব্যাপার হিসেবে দেখা হয়। মুখ-দেখানো উপস্থিতিটাই প্রশংসনীয়, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর; যা তাদের জন্য মরণকষ্ট বয়ে আনে; যাদের পরিবার আছে।
~ সিলভিয়া অ্যান হিউলেট
['সফলতার কান্না' বই থেকে...]

Comments

Popular posts from this blog

গাযওয়াতুল হিন্দ বই pdf - প্রফেসর ড. ইসমাতুল্লাহ | Gazwatul Hind by Professor Dr. Ismatullah

[PDF] সীরাহ মুহাম্মদ প্রথম খন্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড রেইনড্রপস পিডিএফ - Sirah Muhammad (sa:) First & Last Raindrops

সিক্রেটস অব জায়োনিজম Full PDF : লেখক হেনরি ফোর্ড | Secrets of Jainism Bangla Anubad PDF