কৃষ্ণবেণী PDF - সায়ন্তনী পৃততুণ্ড | Krishnaveni - Sayantani Prittunda

"গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।"


কাজী নজরুল ইসলামের "মানুষ" কবিতাটি আমার অনেক পছন্দের। আমি প্রায় এই কবিতা পড়ি। আর ভাবি মানুষ তো মানুষের জন্যই। সবার আগে সে মানুষ তারপর ধর্ম বর্ণ জাতি গোষ্ঠী সব কিছু। তবুও মানুষে মানুষে অনেক ভেদাভেদ। 

সমাজে মানুষ এক সাথে বসবাস করে। তার জন্য তারা এক এক সমাজে এক রীতিনীতি চালু করেছে। ভাগ হয়েছে। ধর্ম আলাদা হয়েছে। কিন্তু মানুষ তো আলাদা হয়নি। ধর্ম আর সমাজের কারণে আজ আমাদের কত কিছু দেখতে হয়৷ আমার দেখি হানাহানি খুন আর মৃত্যু। তবে কেন এই ধর্ম আর সমাজ। যেখানে শান্তিই নেই। তাহলে সমাজ আর ধর্মের দরকার নেই। 

আজ যে বইটি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি সেটি আমি এক বসায় পড়েছি। পড়ার ঘটনাটি চমৎকার বলা যায়। আসলে মানে প্রাণে আমি একজন বাইকার। তো বাইক সার্ভিসে যেতে হয়। নিয়মিত সার্ভিস দরকার। তাই আজও গিয়েছিলাম। আমি সেখানে গেলে একটা বই সাথে করে নিয়ে যাই পড়ার জন্য। কিন্তু আজকে আমি একটা পিডিএফ নিয়ে গিয়েছিলাম।

গত কিছু দিন ধরে আমি ভারতীয় লেখিকা সায়ন্তনী পূততুন্ড এর কয়েকটি বই পিডিএফ পড়েছি। কারণ বই গুলো আমার আসে পাশে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে অর্ডার করেছি আসতে সময় লাগবে। লেখিকার লেখা গুলো বেশ দারূণ। অধিরাজ সিরিজ বেশ চমৎকার বলা যায়। অপর দিকে থ্রিলারের বাইরে দুটি বই পড়েছি একটা হচ্ছে "অসভ্য চোখ" এটা কমেডি ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ। আর আজকে পড়েছি "কৃষ্ণবেনী"।

কৃষ্ণবেণী নামটা দেখার পর একটা হরর জনরা বা সেই পর্যায়ে পরে এমন একটা গল্প ভেবেছিলাম। তবুও কেন জানি এটা ডাউনলোড করলাম। বাইক সার্ভিসে দিয়ে বইটি নিয়ে বসলাম।

শুরুতেই লেখিকা ধাক্কা দিয়েছেন। আর সেটা হচ্ছে মেয়ে কে নিয়ে এক ষোড়শী মা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কাদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেটা তার নিজের মায়ের কাছ থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কথা হচ্ছে নিজের মায়ের কাছ থেকে কেউ পালিয়ে বেড়ায়। কথাটা নিজের কাছেই খটকটা লাগে। 

কাহিনী এক গ্রামের। যেখানে এখনও আধুনিকতার ছোয়া পায়নি ঠিক। কিন্তু অন্ধকার ও কুসংস্কার তাদের ঘিরে রেখেছে। যাদের ধর্ম ও সমাজের রীতি শুধু নিজেরদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যেখানের রীতি হচ্ছে মেয়েরা দেবদাসী হয়ে সেবা করে যাবে। তারা ছোট থাকতেই দেবতার সাথে তাদের বিয়ে হয়। কৈশোর পেরোবার আগেই তাদের তুলে দিতে হয়ে পুরোহিত বা ধনীদের হাতে। এরজন্য তাদের মায়েরা অনেক টাকা পায়। যেখানে আজ ছেলেদের ধরা হয় বংশের ধারক, এখানে মেয়েরা হচ্ছে বংশের ধারক। মেয়েরাই হচ্ছে শেষ বয়সের ভরসা। 

যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে এই নিয়ম। যেখানে কোন ভাটা পরেনি। ইংরেজ এসে আইন করছে, সরকার আইন প্রয়োগ করে সব বন্ধ করেছে। তবে কিছু জায়গাতে এখনও এই দেবদাসী রীতি চলে আসছে৷ বছরের পর বছর মেয়েদের উপর এই অত্যাচার চলে আসছে।

সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলায় শুধু এই গ্রামের মেয়েদের ভাগ্য বদলায়নি। কিন্তু একজন, হ্যা একজন ঠিক ই বিদ্রোহ করে। কেউ একজন আসে যে ঠিক ই সব কিছু বদলে দেয়। যার জন্য সে সব কিছুই বদলে যায়, সেই একজন হচ্ছে "কৃষ্ণবেণী"।

বইটি এই কৃষ্ণবেণীকে নিয়েই লেখা। তার ঘুরে দাঁড়ানো ও সংগ্রামের কথাই বলা হয়েছে৷ ধর্মের কুসংস্কার ও অন্ধকার থেকে নিজেকে ও তার মেয়ে রক্ষার জন্য নিজের জীবন দিয়ে লড়াই করেছে। গল্পটি তার। 

কৃষ্ণবেণী নিজের মেয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় গ্রাম থেকে তবে বেশি দূরে যেতে পারেনি কারণ কিছুই চেনে না। তাই জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে থাকে। যেখানে চিরুথা নামে একজনের সাথে পরিচয় হয়, যে তার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে কৃষ্ণবেণী কে রক্ষা করে৷ 

এই বইটি পড়ার সময় শুধু এটাই ভেবেছি যে একজন মা চায় তার মেয়েকে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ দিতে অপর দিকে অন্য মা চায় যে তার মেয়ে দেবতার সেবার জন্য দাসী হয়ে ধনীদের মন রঞ্জন করুক। মায়ে মায়ে কত পার্থক্য৷ 

মানুষে মানুষে কত পার্থক্য সেটাও দেখা যায়। নিজের ভাইও বিশ্বাসঘাতকতা করে কৃষ্ণবেণীকে ধরিয়ে দিতে চায়। অথচ যার সাথে রক্তের সম্পর্ক নেই সেই চিরুথা তাকে বাচিয়ে নিয়ে যায়। তাকে বাচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেয়। চিরুথার শেষ কথা ছিল -
" তোমার সাথে ওর রক্তের সম্পর্ক, কিন্তু আমার তা নেই.. "

আবেগী তবে অর্থ অনেক বড়। অপর দিকে জঙ্গলের আদিবাসীদের হাতে ধরা পরে যায় কৃষ্ণবেণী৷ যাদের ওরা রাক্ষস বলেই জানত। ভেবেছিল তাকে খেয়ে ফেলবে। অথচ তারাই তার জীবন বাচিয়েছে বাঘের হাত থেকে।

তার সেবা শুশ্রূষা করেছে। তাকে মায়ের স্থান দিয়েছে। এখানেও কিছু কথা দারূন ভাবে লেখা হয়েছে, 

"মা কখনও কি সন্তান কে মারতে পারে। সন্তান অবাধ্য হলে বকা দেয় কিন্তু মেরে ফেলে না৷ আর দেবী তো সকলের মা, তাহলে সে কেন তার বলি চাইবে"। জঙ্গলের মানুষ তবুও যেন সে জঙ্গল নয় মানবিক ও সভ্যতার ধারক। কৃষ্ণবেণী এসব শুনে শুধু ভাবতেই থাকে মানুষে মানুষে কত পার্থক্য। 

এ যেন একই পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন রূপ। আপন মানুষ পর আবার পর যেন অতি আপন। কত রূপ আর রং এই পৃথিবীর।

বইয়ের কাহিনী ও টুইস্ট গুলো বেশ দারূণ যদিও কিছুটা অতিরঞ্জিত। কিন্তু লেখনীর কারণে সেটা বোঝা যায় না। তবে এই থিম নিয়ে লেখা খুব একটা পড়া হয়নি বলে ভালো লেগেছে হয়ত৷ তবে লেখিকা সমাজের এই দিকটি যেমন তুলে ধরেছেন ঠিক সেই ভাবে ভালো মানুষ ও তাদের মানবিকতার গল্প তুলে ধরেছেন। বলা যায় মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দুটো দিক দেখিয়েছেন৷ 

পড়ার সময় ভাবিনি শেষ পর্যন্ত কি হবে। কিন্তু এক বাসায় পড়া শেষ করার পর আমি ভাবছি অনেক দিন পর কোন একটা বইয়ের রিভিউ লিখতেই হবে। সবাই পড়তেই হবে বলছি না। কিন্তু দেব দাসী বা যৌন দাসীদের নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। বইটি আপনারা পড়তে পারেন। 

যদিও আমি পিডিএফ পড়ার ক্ষেত্রে সাপোর্ট দেই না৷ কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এইটা অবৈধ। কিন্তু যেহেতু বইটি পাওয়া যাবে না। তাই আপাতত পিডিএফ পড়েছি। 

সবশেষে একটা কথাই বলব, সমাজ আর ধর্মের উর্ধ্বে হচ্ছে মানুষ। যেমন বলা হয়েছে, সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। ঠিক তেমন ই সমাজ ও ধর্মের নামে কুসংস্কারের অন্ধকার একদিন ঠিকই শেষ হবে।

Credit To Go : Arif Raihan Apu

Krisnobeni Boi/Novel PDF Download

Comments

Popular posts from this blog

[PDF] সীরাহ মুহাম্মদ প্রথম খন্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড রেইনড্রপস পিডিএফ - Sirah Muhammad (sa:) First & Last Raindrops

গাযওয়াতুল হিন্দ বই pdf - প্রফেসর ড. ইসমাতুল্লাহ | Gazwatul Hind by Professor Dr. Ismatullah

সিক্রেটস অব জায়োনিজম Full PDF : লেখক হেনরি ফোর্ড | Secrets of Jainism Bangla Anubad PDF