নায়ক - সত্যজিৎ রায় | Nayok

বই - নায়ক 
পরিচালক - সত্যজিৎ রায়।
শ্রেষ্ঠাংশে - উত্তম কুমার ও 
শর্মিলা ঠাকুর।
পরিবেশক - এডওয়ার্ড হ্যারিসন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)।
মুক্তি - ৬ মে ১৯৬৬ (ভারত)।
দৈর্ঘ্য -১২০ মিনিট।
ভাষা - বাংলা।
Review Credit : Badhon Sarker 


ছবির প্রধান চরিত্র বাংলা চলচ্চিত্রের এক ম্যাটিনি আইডল অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। তিনি একটি জাতীয় পুরস্কার গ্রহণের জন্য রেলপথে কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন। সেই ২৪ ঘণ্টার যাত্রাপথে অদিতি নামে এক অল্পবয়সী সাংবাদিকের কাছে নিজের ভুলভ্রান্তি, নিরাপত্তাহীনতা ও অনুতাপ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তা-ই এই ছবির উপজীব্য বিষয়। অদিতি পূর্বে ম্যাটিনি আইডল জাতীয় খ্যাতনামা ব্যক্তিদের বিশেষ অপছন্দ করতেন। কিন্তু অরিন্দমের কথা শুনে তিনি বুঝতে পারেন, তার খ্যাতির আড়ালে তার মনের মধ্যে কোথাও একটি একাকিত্বের ভাব রয়েছে। 

অদিতির মনে অরিন্দমের প্রতি সহানুভূতি জাগে। তিনি স্থির করেন, অরিন্দমের কথা তিনি প্রকাশ করবেন না এবং ম্যাটিনি আইডল জনমানসে তার ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে সাহায্য করবেন। এই ছবিতে সাতটি ফ্ল্যাশব্যাক এবং দু’টি স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে অরিন্দমের জীবনের সঙ্গে তার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থানটিকে পরিস্ফুট করে তোলা হয়েছে।

কিছুটা সিনেমাটির কলাকুশলীদের নিয়ে আলোচনা করে নিই৷ 

উত্তম কুমার – অরিন্দম মুখোপাধ্যায় হিসেবে একজন অভিনেতার রোলপ্লে করেছেন৷ উত্তম কুমারের সিনগুলো অনেকাংশেই দারুণ। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে খামতি দেখা যায় দৃশ্যধারণে৷ দেখে মনে হচ্ছিলো কোথাও তিনি আটকে আটকে যাচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যাংশের সিনগুলোতে যদিও ক্রিটিক মাইন্ড নিয়ে না দেখলে ধরার উপায় নেই৷ তাছাড়া উত্তম কুমার যে অনবদ্য তা আমরা জানি সত্যজিৎ রায় কেমন পরিচালক৷ এখানে একটা সংলাপে একটু থামতে হয় ভাবতে হয়। যেমন -  
"অদিতি: এই যে আপনার দারুণ খ্যাতি, এটা কেমন লাগে?
অরিন্দম: বেশ তো, ভালই তো!
অদিতি: কিন্তু এই যে বেশি করে পাওয়া, এর মধ্যে একটা ফাঁক, একটা অভাববোধ, কোন রিগ্রেটস নেই?
অরিন্দম: দেখুন মিস সেনগুপ্তা, আমাদের খুব বেশি কথা বলতে নেই। আমরা ছায়ার জগতে বিচরণ করি তো, কাজেই আমাদের রক্ত মাংসের জ্যান্ত শরীরটা জনসাধারণের সামনে খুব বেশি করে তুলে না ধরাই ভাল। কী বুঝলেন?"

শর্মিলা ঠাকুর – অদিতি সেনগুপ্ত, সাংবাদিক। এই সিনেমাতে শর্মিলা ঠাকুরের চিত্রায়ন নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথাই আসে৷ এই প্লটে শর্মিলা ঠাকুরকে ঠিকঠাক মানায়নি বলেই মনে হয়েছে৷ আরেকটু ভারস্থ কাউকে বেশি পারফেক্ট মনে হতো৷ ট্রেনযাত্রার শেষে অদিতি তার নেওয়া সাক্ষাতকারের পাতাগুলো অরিন্দমের সামনেই ছিঁড়ে ফেলে। অরিন্দম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “মন থেকে লিখেবেন নাকি?”  অদিতি উত্তরে বলে, “মনে রেখে দেব।”  অর্থাৎ নায়ককে সে যে রূপে আবিষ্কার করেছে, তা তার মনের কুঠুরিতেই আবদ্ধ রাখবে। বাইরের কাউকে জানানোর ইচ্ছা তার নেই। 

বীরেশ্বর সেন – মুকুন্দ লাহিড়ী, প্রবীণ অভিনেতা। এই সিনেমায় মুকুন্দ লাহিড়ীর যেটুকু সিন আছে তা বেশ দারুণ। চুটিয়ে উপভোগ করেছি বলতেই হয়৷ 

সোমেন বসু – শঙ্করদা, অরিন্দমের পাড়ার নাটকের ব্যবস্থাপক। এই চরিত্রকে আরেকটু ডিটেইলসে দেখানো যেতো। মানছি তাতে সিনেমা কিছুটা মন্থর হয়ে যেতো কিন্তু যারা ভালো মানের গভীর সিনেমা দেখতে চায় তারা নিঃসন্দেহে প্রাণ ভরে দেখতো৷ তার একটি সংলাপ এমন যে মঞ্চের স্বাধীনতার সাথে ফিল্মের তুলনা করে তিনি বলেছিলেন, "ফিল্মের একটা গ্ল্যামার আছে জানি। কিন্তু তার সাথে আর্টের কোন সম্পর্ক নেই। থাকতে পারে না।" 

নির্মল ঘোষ – জ্যোতি, অরিন্দমের ম্যানেজার। সার্পোটিভ রোল হিসেবে জ্যোতির চরিত্রায়ন ভালো। 

প্রেমাংশু বসু – বীরেশ, বামপন্থী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা। যতোটুকু প্লটে থাকা উচিত তারচেয়েও বীরেশ জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছিলো৷ 

সুমিতা সান্যাল – প্রমীলা চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দমের সহ-অভিনেত্রী। ওই। সহ-অভিনেত্রী হিসেবে মানানসই৷ 

এছাড়াও আরো অনেক কলাকুশলী ছিলেন যারা খারাপ ভালো মিলিয়ে বেশ অভিনয় করেছেন৷ 

১৯৬৬ সালে বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে 'স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ডে'র পাশাপাশি 'শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম' এবং 'শ্রেষ্ঠ কাহিনি ও চিত্রনাট্য' বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে 'নায়ক'।

Comments

Popular posts from this blog

[PDF] সীরাহ মুহাম্মদ প্রথম খন্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড রেইনড্রপস পিডিএফ - Sirah Muhammad (sa:) First & Last Raindrops

গাযওয়াতুল হিন্দ বই pdf - প্রফেসর ড. ইসমাতুল্লাহ | Gazwatul Hind by Professor Dr. Ismatullah

সিক্রেটস অব জায়োনিজম Full PDF : লেখক হেনরি ফোর্ড | Secrets of Jainism Bangla Anubad PDF