একাত্তরের কানাগলি PDF : লেখক আসিফ সিদ্দিকী দীপ্র | Ekattorer Kanagoli PDF - Asif Siddiki Dipro

  • বই : একাত্তরের কানাগলি PDF Download Available ⤵️ Now 
  • লেখক : আসিফ সিদ্দিকী দীপ্র
  • জনরা : মৌলিক, স্পাই থ্রিলার, অ্যাকশন,ঐতিহাসিক স্পাই থ্রিলার।
  • প্রকাশনী : বুকস্ট্রিট
  • প্রকাশক : রোদেলা প্রকাশনী 
  • প্রচ্ছদ : অনীক মোস্তফা আনোয়ার
  • প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
  • পার্সোনাল রেটিং : ৪.৫/৫

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের কোভার্ট এ্যাকশন ডিভিশনে একটি ইন্টারোগেশন হয়, যার সাথে আপাতদৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের কোনো সম্পর্কই ছিল না; তার সূত্র ধরে হয় একটি ছোট্ট অপারেশন, এবং এরপর থেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন জাগতে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মনে। যার উত্তর উদ্ধার করতে গিয়ে বের হয়ে পড়ে পর্দার অন্তরালে চলতে থাকা একটি অত্যন্ত গোপন এবং উন্মত্ত অপারেশনের।

এমন কিছু সেই অপারেশনে ছিল যা বাস্তবায়িত হলে কেবল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেই নয় ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে সমগ্র বিশ্বজুড়েই।
মাত্র গুটি কয়েক লোকের কাছে ফাঁস হয়ে যাওয়া সেই প্ল্যান বানচাল করতে, বাংলাদেশকে, এবং সারা বিশ্বকে একটি সম্ভাব্য ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য কিন্তু একই লক্ষ্য নিয়ে একদল বেপরোয়া লোক নেমে পড়ে একটি অত্যন্ত গোপন মিশনে।

মুক্তিযুদ্ধের সাথে সমান্তরালভাবে চলতে থাকা সেই মিশনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে মুক্তিযুদ্ধের ভাগ্য, বাংলাদেশের ভাগ্য এবং সমগ্র বিশ্বের ভাগ্য। 

সাথে রয়েছে কিছু রহস্যময় চরিত্র, যাদের আনাগোনা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে পুরো মিশনটাকে এবং নিজেরাও প্রভাবিত হয়েছে মিশনটির কারণে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধ, আমেরিকা থেকে চীন এবং করাচির গলি থেকে শুরু করে ধানমন্ডির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা একটি সম্পুর্ণ ভিন্নধর্মী স্পাই থৃলার 'একাত্তরের কানাগলি'র গল্প।

একাত্তরের কানাগলি বাঙালি মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতা আর কয়েকজন দেশপ্রেমিকের স্বপ্ন আর দূরদর্শিতার কাছে হিংস্র, বর্বর, অমানবিক পশ্চিম পাকিস্তানের হেরে যাওয়ার গল্প।


সময়টা ১৯৭১। ক্ষমতালোভী ইয়াহিয়া খানের আদেশে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। সে সময়ের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু এরাই পূর্ব পাকিস্তানে যে উচ্ছৃঙ্খলতার পরিচয় দিল তা সবাই দেখেছে। খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ কিছুই বাদ ছিল না। কিন্তু ইয়াহিয়া খান তো আগেই বলে দিয়েছেন যে এ দেশের মানুষ চান না, শুধু মাটিটা চান। চলতে থাকলো নির্যাতন। ভেঙে দেওয়া হলো পূর্ব পাকিস্তানের মেরুদণ্ড। 

উপন্যাসটি শুরু হয় কতগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে যেখানে কয়েকজনের আত্মহত্যা, একজনকে জোর করে ফাঁসিতে ঝোলানো, আর একজন স্পাই গুলিবিদ্ধ হয়ে বঙ্গোপসাগর পতিত হতে দেখা যায়। ঘটনাগুলো পাঠকের মনে কৌতুহল সৃষ্টি করে।

পূর্ব পাকিস্তান যখন যুদ্ধে জর্জরিত তখন পশ্চিম পাকিস্তানে একটা ইন্টেলিজেন্স সংস্থা খবর পেল যে এক বড় অস্ত্রের দালালের সাথে বেলুচের বিদ্রোহীদের অনেক বড় ডিল হয়েছে। কি নিয়ে ডিল হয়েছে বা কারা এই বিদ্রোহী অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো অনেক বড় পরিকল্পনা যার সাথে ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলি ভুট্টোর মতো বড় মাপের লোকেরা জড়িত। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কিংবা ভারতকে দমিয়ে রাখার জন্য কিংবা ধ্বংস করার জন্য তারা কিছু তৈরি করতে চাইছে যার জন্যই এতো গোপনীয়তা, এতো পরিকল্পনা। 

কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে থাকে যখন আই.এস.আই এর হাই-প্রোফাইলড স্পাইরা বিশ্বাসঘাতক হয়ে ওঠে। একজন অর্থের জন্য, আরেকজন ভারতের জন্য কাজ করে। তবে আরেকজন ছিলো যে কিনা বাংলাদেশ, যেটির তখনও কোন অস্তিত্ব ছিল না, এর জন্য কাজ করছে শুরু থেকেই। মূলত সেই গল্পের প্রধান চরিত্র। 

বইটি পড়লে একজন লেখককে , বিশেষ করে যিনি ঐতিহাসিক স্পাই থ্রিলার লেখেন, কতকিছু জেনে, গবেষণা করে বই লিখতে হয় তা বোঝা যায়। বাংলাদেশে এ মানের থ্রিলার লেখা সম্ভব সেটা অনেকেই বুঝে না।

যা হোক। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র ইউ.এস.এ নিজেকে পাকিস্তানের বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন, আমেরিকার সবচেয়ে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট, তার 'জানের দোস্ত' ইয়াহিয়াকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন পূর্ব পাকিস্তানে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে। করবে নাই বা কেন? চীনের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করে দেওয়া এবং চীনকে ভারত সীমান্তে চাপ সৃষ্টির জন্য সুপারিশ করতে ইয়াহিয়া খান নিক্সনকে সাহায্য করে। তাই ইয়াহিয়াকে গদি থেকে সরানো যাবে না, এবং বন্ধুত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকতে হবে। এই ছিল তার মনোভাব। আর মদদ দেওয়ার জন্য 'হা মে হা মিলানে ওয়ালা' হেনরী কিসিঞ্জারতো পাশে ছিলোই!

অন্যদিকে ইয়াহিয়া চাচ্ছিল ভারত আর পৃর্ব পাকিস্তান, যার বাসিন্দাদের তার ঠিক পাকিস্তানি বলে মনে হতো না, ওপর প্রভার বিস্তার করা। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান বার বার তার মনঃক্ষুণ্ন করেছে। অপারেশন সার্চলাইট ও বাঙালিকে বেশিদিন দমিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। তবে ক্ষমতালোভী ইয়াহিয়া খান তো হতে দিতে পারে না। উগ্র দেশপ্রেমিক যখন ক্ষমতালোভী হয়ে যায় আর সারাদিন হাতে মদের গ্লাস নিয়ে চিন্তা করতে থাকে কিভাবে ভারত আর সেই তথাকথিত 'নিমকহারাম' পূর্ব পাকিস্তানের ওপর প্রভাব বিস্তার করা যায় তখন তো বড় ধরনের অস্ত্রই তার শেষ ভরসা হয়ে ওঠে। জুলফিকার ভুট্টো যখন আবদুল কাদির খানকে 'ইগোম্যানিয়াক' ইয়াহিয়ার কাছে নিয়ে আসে সেই ভয়ংকর প্রস্তাব নিয়ে তখন তিনি সাদরে গ্রহণ করেন। মানুষ মরলে তার কিছু যায় আসে না। তার তো ক্ষমতা লাগবে। আর ভারতের মতো দেশ, যার প্রধানমন্ত্রী নাকি একজন মহিলা, কিভাবে ইয়াহিয়ার পেয়ারা পাকিস্তানকে দমিয়ে রাখতে পারে!

ইন্দিরা গান্ধী বাঙালিদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন। শরণার্থী হিসেবে জায়গা দিয়েছেন, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, বাহিনী দিয়ে সাহায্য করেছেন যুদ্ধে। তবে বাংলাদেশ ভারতের কাছে একটা ইনভেস্টমেন্ট ছিলো যার প্রতিদান তারা সময়মতো লুফে নিয়েছে। 

হোসেন সোহরাওয়ার্দী যখন পূর্ব পাকিস্তানের শোচনীয় অবস্থা করে ব্যথিত হন, তখন পাঠক বুঝতে পারে যে কতোটা বাজে ছিলো আমাদের অবস্থা। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই শুধু পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য আর বৈষম্য। শেখ মুজিবও সেটা বুঝতে পারতেন এবং তার আদর্শ সোহরাওয়ার্দীকে আশাবাদী করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু আশা দিয়ে লাভ কি যখন পশ্চিম পাকিস্তান কখনও পূর্ব পাকিস্তানের দিকে ফিরেও তাকায় না? তারা জানতো যে একসময় দেশভাগের জন্য বড় আন্দোলন হবে আর এর জন্য বড় ধরনের যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এমনও হতে পারে পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে বাঙালি নিজেদের পরিচয় হারাবে। এমন সময় দরকার ছিল একজনের যে কিনা পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মকান্ড সম্পর্কে গভীরভাবে জানবে। তাই তাকে মিশে যেতে হবে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর মহলের সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এমন কাউকেই পেয়েছিলেন! তাকে ট্রেনিং দেওয়া হলো। দেওয়া হলো নতুন নাম আর পরিচয়। কিন্তু মানুষের স্মৃতি কখনো পাল্টানো যায় না। নিজের কাছের মানুষদের হারিয়ে ফেলেছে সে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রে। প্রতিশোধের নেশা তার মধ্যে লুকায়িত ছিল। আর এই নেশা অসাধারণ নৈপুণ্যে মিশে গেছে এই দেশব্রতীর কাজকর্মে। অথচ বাংলাদেশ কখন স্বাধীন হবে এটা কারোরই জানা ছিল না। এই মিশনের কোন মেয়াদকাল ছিল না।

জাপানের হিরোশিমা, নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে ইউ.এস.এ বিশ্ব দরবারে আগে থেকেই কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। তাই ইয়াহিয়ার কাজে নিক্সনের কোন বাধা না দেওয়া আমেরিকার গোয়েন্দা মহলের একটি বিশেষ কিন্তু গোপন সংস্থার টনক নাড়লো। তাই তাড়া গোপনে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আড়ালে কাজ শুরু করলো।

একপক্ষের লক্ষ্য হলো ভয়ংকর অস্ত্র ব্যবহারের ভয় দেখিয়ে ভারতকে পূর্ব পাকিস্তান সমস্যায় পিছু হটতে বাধ্য করা কিংবা পাকিস্তানের অন্যান্য দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা অথবা ঢাকায় অস্ত্রটি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। আর অপরপক্ষের লক্ষ্য ছিল অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ না দেওয়া, ধ্বংস করে ফেলা। শেষ পর্যন্ত কার বিজয় হলো? আধিপত্যের লোভ নাকি সাহসী যোদ্ধার স্বপ্ন আর ভালোবাসার? জানতে হলে পড়ুন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম স্পাই থ্রিলার 'একাত্তরের কানাগলি'।
© রিয়াদ চৌধুরী


ডাইনিং টেবিলে বসে বিষ প্রয়োগে তুহিন নামে অজ্ঞাত কেউ আত্মহত্যা করলো। সাথে বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলল আরেক ব্যক্তিকে।

বঙ্গোপসাগরে স্পিডবোটে জাহিদ-আল পাশা নামে কারোর উপর হামলা হয়। গুলি লেগেছিল দুটো, কাঁধেরটা ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। ডুবে যাচ্ছিল জাহিদ আল পাশা।

বিশ্বাসঘাতক সাদা কাগজে লিখে কপালে পিন দিয়ে আটকিয়ে ঢাকা শহরের চার প্রান্তে খাকি পোশাক পড়া একদল লোক চারজনকে হত্যা করে। 

একজন কুখ্যাত আর্মস ডিলারকে পেয়েও ছেড়ে দেওয়া হলো। অ্যারেস্টিং টিমের একজন অ্যাকশন সিনেই অবিশ্বাস্যভাবে মারা গেল, বাকি তিনজনের কপালে জুটল বিশ্বাসঘাতকের তকমা। 

স্ট্যান এবং স্যাম দুইজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলো কুখ্যাত মন্টেলুপিক প্রিজন থেকে নাৎসি বাহিনীর সাবেক এসএস অফিসার ম্যানুয়াল ফিলিপকে বের করে আনার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধ, পোল্যান্ডের মন্টেলুপিক এর গেস্টাপো প্রিজন থেকে আমেরিকা, করাচী থেকে চীন আর সর্বশেষে ইস্টের ঢাকার ধানমন্ডির পথ ধরে খুলনার ছোট্ট গ্রাম রামপাল- কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিছু রহস্যময় চরিত্র, কিছু নির্দিষ্ট দিন আর তারিখ স্পাইডার ওয়েবের মতো মিলবে একটা কেন্দ্রেই। একটা মিশন- যেটা ব্যর্থ হলে হুমকির মুখে পড়ে যাবে গোটা মানবজাতির ভবিষ্যত। 

আসিফ সিদ্দিকী দীপ্র প্রথম নিয়ে এসেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম স্পাই থ্রিলার 'একাত্তরের কানাগলি'। ভদ্রলোক রবার্ট লুডলাম আর ফ্রেডরিখ ফরসাইথের লেখার দারুণ ভক্ত। তার ফার্মের নামটি লুডলামের একটা লেখা থেকে নেওয়া৷ এছাড়া তিনি একজন অনুবাদকও।

তবে কিছু সমস্যাও আছে। তেমন কিছু না, বানান ভুল। স্পেশালি ইংরেজি বানান বাংলায় লেখার সময়, যেমন স্যাবোটাজকে 'স্যাবাটোজ',  ইউজুয়ালকে 'উইজুয়াল', ব্যাডঅ্যাসকে 'ব্যাডঅ্যাশ', আরো কিছু। তাছাড়া নতুন পাঠক হলে পড়তে অসুবিধা লাগতে পারে, কিছু জায়গায় ভাষা একটু কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, যতক্ষণ বইটা শেষ না করতে পারছিলাম, প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছিলো। ৩২৭ পৃষ্ঠার এই বইটিতে পাতায় পাতায় রোমাঞ্চ যা পাঠককে এক তুমুল কিওরিসিটিতে ফেলে দেবে।

আরেকটা জিনিসের প্রশংসা না করে পারা যায় না- সেটা হল বইটির প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ হচ্ছে বিক্রিয়ার পজিটিভ ক্যাটালিস্টের মত, যেটা বই পড়ার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয়। 

সর্বোপরি, লেখকের রিসার্চ, যত্ন আর প্রশংসনীয় কল্পনাশক্তির মিশেল এই বইটি আমার অক্টোবরের শুরুটা চমৎকারভাবেই করেছে।


কাহিনি সংক্ষেপঃ ১৯৭১। মরণপণ যুদ্ধ চলছে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা বুকের সমস্ত সাহস ও ভালোবাসাকে পুঁজি করে বেপরোয়াভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে নরপিশাচ পাকিস্তানিদের ওপর। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বিড়ালও ভয়ঙ্কর। ঠিক তাই হলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেও। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়লো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ চারপাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চার দেয়ালের মতো চেপে আসতে লাগলো ওদের দিকে। কোণঠাসা হয়ে পড়ার অবস্থা পাকিস্তানিদের। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ভূখণ্ডের ভেতরের যুদ্ধপরিস্থিতি যখন এমন, তখন পর্দার অন্তরালে চলছে আরো একটা যুদ্ধ।

পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স সংস্থা আই.এস.আই. হঠাৎ করেই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়লো একজন আর্মস ডিলারের তালাশ নিয়ে। এজেন্সির তিনজন বাঘা এজেন্টকে লাগিয়ে দেয়া হলো সেই ডিলারের পেছনে। আই.এস.আই. ডিরেক্টর আকবর খান সরাসরি আছে এসবের পেছনে। হঠাৎ একজন আর্মস ডিলারকে নিয়ে এতো মাতামাতি কেন, যেখানে পূর্ব পাকিস্তানে ওদের মিলিটারি প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মুক্তিবাহিনীর কাছে?

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান হঠাৎ যেন পাগল হয়ে উঠেছে ইন্ডিয়ার ওপর আঘাত হানার জন্য। কারণটা স্পষ্ট, ইন্ডিয়া সরাসরি সাহায্য করছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমানের বাংলাদেশকে। আর পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সাহায্য করে চলেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন। নিউক্লিয়ার বম্ব বানানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে জুলফিকার আলী ভুট্টো। ইয়াহিয়াও দ্রুত বোমা চায়। আর সেজন্য অত্যন্ত গোপনে আই.এস.আই.-এর তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে সে। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে যদি পাকিস্তানের হাতে নিউক্লিয়ার বম্ব চলেই আসে, তাহলে একরকম পাশার দানই উল্টে যাবে।

ঢাকার ছেলে ইমরান সালেহীন খান ছোটবেলায় হারিয়েছে নিজের বাবা-মাকে। সেই হারানোও তাঁদের জন্য ছিলো অত্যন্ত অপমানজনক। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা ও দেশের চলতি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কিছু করার জন্য একেবারে শত্রুর গুহায় গিয়ে ঢুকে পড়লো ছেলেটা। আর এই ব্যাপারে জানলেন মাত্র দু'জন ব্যক্তি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বিশ্বাসঘাতকতা করে চলেছে একের পর এক আই.এস.আই. কভার্ট এজেন্ট। কেন? নিউক্লিয়ার বম্ব তৈরির ফ্যাসিলিটিটা কোথায় স্থাপন করা হয়েছে সেটা জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে একজন তরুণ মেজর। পশ্চিম পাকিস্তানের এই ভয়াবহ প্ল্যান বানচাল করে না দিতে পারলে যুদ্ধটা নেবে আরো ধ্বংসাত্মক রূপ। কয়েকজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে সাথে নিয়ে সেই মেজর নেমে পড়লো ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রায় অসম্ভব এক মিশনে। সি.আই.এ.-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তির তত্ত্বাবধানে এজেন্ট অ্যারন বার্টনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো। আর ওদেরকে সরাসরি সাহায্য করলো বন্ধু রাষ্ট্র ইন্ডিয়ার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি 'র।

দেশের ভেতরে চলতে থাকা দৃশ্যমান সেই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের আড়ালে এসপিওনাজ দুনিয়ায় সমান্তরালে চলছিলো আরেক যুদ্ধ। যে যুদ্ধে কে বন্ধু, কে মিত্র আর কে বিশ্বাসযোগ্য, কে বিশ্বাসঘাতক বোঝা কঠিন। যে গোপন যুদ্ধের কথা হারিয়ে গেছে একাত্তরেরই কোন এক কানাগলিতে।


পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ কঠিন কাজ হলো, বাস্তব একটা ঘটনা ও সেটার সাথে জড়িত বাস্তব চরিত্রদেরকে নিয়ে সম্পূর্ণ কাল্পনিক প্রেক্ষাপটে একটা কাহিনির সৃষ্টি করা। এই কঠিন কাজটাই করেছেন তরুণ লেখক আসিফ সিদ্দিকী দীপ্র। 'একাত্তরের কানাগলি'-এর প্লটটা পুরোটাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের এসপিওনাজ দুনিয়া নিয়ে। লেখক এই উপন্যাসের শুরু থেকেই বেশ কিছু আলাদা সূত্রের মুখোমুখি করেছেন পাঠককে। এরপর ধীরে ধীরে সেই সূত্রগুলো গিয়ে মিলেছে একটা নির্দিষ্ট জংশনে। আর সেই জংশনেই এসে একটা সময় মিলেছে উপন্যাসটার ক্লাইম্যাক্স।

কিছু চরিত্র থাকে যারা কুয়াশার ভেতরে আবির্ভূত হয়, তারপর কুয়াশা কেটে গেলে দেখা যায় তারা নেই। অথচ রেখে গেছে নিজেদের কীর্তি। এমনই এক চরিত্র ইমরান সালেহীন খান। এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে আসিফ সিদ্দিকী দীপ্র দেখিয়েছেন একের পর এক টুইস্টের মারপ্যাঁচ। অবশ্য গোটা 'একাত্তরের কানাগলি' জুড়েই এসপিওনাজ রিলেটেড টুইস্টের কোন কমতি চোখে পড়েনি। কভার্ট অপারেশন ও ইন্টেলিজেন্স অ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে লেখকের জ্ঞান আমাকে মুগ্ধ করেছে। বোঝাই যায়, এসব নিয়ে অনেক স্টাডি করতে হয়েছে উনাকে। 

প্রত্যেকটা ক্যারেক্টারের ডেভেলপমেন্ট দারুন ছিলো। গল্প বলার ধরণেও মনে হয়নি এটা লেখকের প্রথম উপন্যাস। এসপিওনাজ অ্যাকশন সিকোয়েন্স ও স্ট্রাটেজিগুলোর বর্ণনা বেশ ভালো লেগেছে। উত্তেজনা বোধ করেছি। সামান্য কিছু জায়গায় অবশ্য একটু দুর্বোধ্য লেগেছিলো, তবে ওই জায়গাগুলো দ্বিতীয়বার পড়ার ক্লিয়ার হয়ে গেছে। 'একাত্তরের কানাগলি' একেবারে আনপ্রেডিক্টেবল একটা এসপিওনাজ থ্রিলার। পড়া শুরু করার পর কোনভাবেই আন্দাজ করা যাচ্ছিলোনা এরপর ঠিক কি ঘটতে চলেছে। সাসপেন্সের কোন কমতিই ছিলোনা এখানে। মোট কথা, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন ধরণের কোন গল্প পড়তে চাইলে আপনি বেছে নিতে পারেন 'একাত্তরের কানাগলি'। 

এবার বলি হতাশার কথা। আমি বোধহয় জীবনেও এমন কোন বই পড়িনি, যেটার প্রত্যেকটা পৃষ্ঠায় টাইপিং মিসটেক বিদ্যমান। এই বইটাতে তাই ছিলো। অসংখ্য টাইপিং মিসটেক, যা গুনে শেষ করা প্রায় অসম্ভব। বেশ কিছু বানানও ভুল পেয়েছি। আমি যে কপিটা পড়েছি সেটা সম্ভবত রোদেলা প্রকাশনীর ফার্স্ট এডিশনের বই। কোনরকম প্রুফরিডিং ছাড়াই যে বইটা বাজারে ছাড়া হয়েছিলো, তা একটা বাচ্চা ছেলেও বুঝে যাবে এর কয়েকটা পৃষ্ঠা পড়লেই। আমি জানিনা, এমন অসাধারণ একটা উপন্যাসের এই হাল কেন হয়েছিলো। লেখক ও প্রকাশকই ভালো বলতে পারবেন। আমি এটাও জানিনা পরবর্তী এডিশন গুলোতে এই টাইপিং মিসটেক গুলো ঠিক করা হয়েছে কিনা। তবে এটা জানি, ইন্ডিয়াতেও এই বইটা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এবং মোটামুটি ভালো সাড়াও পাওয়া গেছে। আসিফ সিদ্দিকী দীপ্র তাঁর লেখালেখি কন্টিনিউ করবেন, এমনটাই আশা।

অনীক মোস্তফা আনোয়ারের করা প্রচ্ছদটা ভালো লেগেছে। আগ্রহীরা চাইলে পড়তে পারেন বইটা।

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৩.৮৫/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৪.৪২/৫

~ শুভাগত দীপ ~
(২২ এপ্রিল, ২০২০, দুপুর ১ টা ২৯ মিনিট; নিজ রুম, নাটোর)

একাত্তরের কানাগলি PDF : লেখক আসিফ সিদ্দিকী দীপ্র | Ekattorer Kanagoli PDF - Asif Siddiki Dipro PDF Download Link 

Comments

Popular posts from this blog

[PDF] সীরাহ মুহাম্মদ প্রথম খন্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড রেইনড্রপস পিডিএফ - Sirah Muhammad (sa:) First & Last Raindrops

গাযওয়াতুল হিন্দ বই pdf - প্রফেসর ড. ইসমাতুল্লাহ | Gazwatul Hind by Professor Dr. Ismatullah

সিক্রেটস অব জায়োনিজম Full PDF : লেখক হেনরি ফোর্ড | Secrets of Jainism Bangla Anubad PDF